স্ত্রীর লাশ নিয়ে রাত কাটালেন চায়ের দোকানে

  • পটুয়াখালী প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২০, ১০:৩৪ এএম
স্ত্রীর লাশ নিয়ে রাত কাটালেন চায়ের দোকানে

পটুয়াখালী: কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা কহিনুর বেগম। গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন। মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে তাকে ভর্তি করা হয়, তবে রাত ১০টায় তিনি মারা যান।

গত ১৪ মে আগুনে পুড়ে যায় জলিল আকন ও কহিনুর বেগম দম্পত্তির বসতঘর। যে কারণে সন্তানকে নিয়ে অন্য একজনের বাড়ির বৈঠকখানায় থাকছিলেন তারা। করোনাভাইরাস আতঙ্কে অন্যদের আপত্তি থাকায় হাসপাতালে থেকে স্ত্রীর লাশটি সকালে নিতে চাচ্ছিলেন জলিল।

কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোর করে একটি অটোতে তুলে কোহিনুরের মরদেহ পাঠিয়ে দেয়। অগ্যতা স্ত্রীর লাশটি নিয়ে জলিল ওঠেন নিজের খুপরি চায়ের দোকানে। এদিকে শুরু হয় বৃষ্টি। সদ্য মৃত স্ত্রীর পাশে বৃহস্পতিবার সারারাত বসেছিলেন জলিল।

সকাল হলে কোহিনুরের মৃত্যুর খবর জানতে পারে গ্রামবাসী। কিন্তু তাও কেউ এগিয়ে না আসায় স্ত্রীর মরদেহ নিজেই গোসল করান জলিল। পরে স্থানীয় মো. মিজানুর রহমান এবং সুবিদখালী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মাহবুব আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

জলিল বলেন, ‘আমার বাড়িতে ঘর নেই। আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। তা না হলে বাড়িতেই কোহিনুরের লাশ নিয়ে আসতে পারতাম। তাই তার লাশ শুক্রবার সকালে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ডাক্তার শরিফুল ইসলাম রাতেই একটি অটোতে করে লাশ পাঠিয়ে দিয়েছে।’

এ ব্যাপারে মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে আমরা সব মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই দাফন-কাফনের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিতে বলি। জোর করে তাকে (জলিল আকন) লাশ দেওয়া হয়নি। বুঝিয়ে শুনিয়ে তার সঙ্গে লাশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মধ্যে রাতে লাশ বাড়িতে পাঠানো উচিত হয়নি। শুনেছি, ওই নারীর বাড়ি কয়েক দিন আগে আগুনে পুড়ে গেছে। আমি যখন বিষয়টি জেনেছি, তখন লাশ তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। ওই নারী ইউরিনারি ইনফেকশনজনিত রোগে ভুগছিলেন।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণে বিস্মিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মো. আবু বকর ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে রাত ১১টায় ফোন করে বলেছিলাম লাশ পরের দিন হস্তান্তর করতে। কিন্তু তারা রাতেই লাশ পাঠিয়ে দিয়েছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

সোনালীনিউজ/এএস

Link copied!