স্থানীয় পশুতে মিটবে চাহিদা

কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১৪ হাজার পশু  

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২১, ০৭:০৬ পিএম
কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১৪ হাজার পশু  

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় খামারি ও গৃহস্থরা এক প্রকার ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। তারা কোরবানির জন্য পশুগুলোকে বিক্রির জন্য এ বছর দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করণে কাজ করে যাচ্ছেন। 

চলতি বছর পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ১৪ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমান পেক্ষাপটে এ বছর কোনো প্রকার পশুর ঘাটতি হবে না বলে প্রাণীসম্পদ বিভাগ জানায়।

গত বছর কোরবানি পশুর চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার পশু। যা স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করাসহ কোনো প্রকার ঘাটতি হয়নি বলে জানা গেছে।

প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়,পৌর শহরসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৫০৬টি খামারসহ, পারিবারিকভাবে কৃষক তাদের বাড়িতে মোটাতাজাকরণসহ মোট ১৩ হাজার ৮৩২টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এরমধ্যে  গরু ১১১৫০টি মহিষ ৩৬৩টি  ও ছাগল  ভেড়া ২৩১৯টি  রয়েছে।

সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় সদর উপজেলাসহ অন্যান্য স্থান থেকে আরো ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পশু আসবে বলে আশা করছেন। এ উপজেলায় যে পরিমাণ পশু কোরবানি করা হবে তা স্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রাণী সম্পদ অফিস জানায়। 

এদিকে খামার ও পারিবারিকভাবে পশু লালন পালন করে প্রস্তুত করতে যে টাকা খরচ হয়েছে বর্তমান এ পরিস্থিতিতে তা উঠানো যাবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে নতুন শঙ্কা। খামারিরা বলছেন, সরকার যদি লাকডাউন শিথিল করে এবং সরকারি নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় পশুর হাটে গরু উঠানো যায় তাহলে বিক্রি নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যা তৈরি হবে না।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পশু পালন করতে তাদের গত বছরের তুলনায় এবছর গো-খাদ্যসহ অন্যান্য খরচ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিক্রিতে নায্য মূল্য না পেলে তাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে খামারিরা জানায়।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারি ও  কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , খামারগুলোর বেশীভাগেরই উদ্দেশ্য হল ঈদকে সামনে রেখে গরুকে মোটাতাজা করা। প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা তাজা করতে ও সুস্থ রাখতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল ভুষিসহ পুষ্টিকর খাবার মাধ্যমে দেশীয় জাতের গরুই বেশী লালন পালন করছেন । বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন তাদের পালনকৃত ওইসব পশু গুলোকে। কিন্তু যতই ঈদ ঘনিয়ে আসছে সে অনুযায়ী পশু বিক্রি না হওয়ায় তারা এক প্রকার দুশ্চিন্তায় ভোগছেন খামারি ও গৃহস্থরা। 

উপজেলার মনিয়ন্দ এলাকার খামার মালিক তাজু ভূইয়া বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এই কোরবানি  ঈদে  বিক্রি অনেক কষ্ট করে দেশীয় পদ্ধতিতে তিনি ১০টি গরু লালন পালন করেন । আর মাত্র কয়েক দিন বাদে পবিত্র ঈদুল আজহা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে পশুর হাট জমে না উঠলেও  অনেকেই ক্রয় করতে তার বাড়িতে যোগাযোগ করছেন। তিনি আশা করছেন ঈদের আগেই গরুগুলো বিক্রি হবে।

খামার মালিক মো.মাহফুজ মিয়া বলেন, কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে গত ৮ বছর ধরে এ গরু লালন পালন করে বিক্রি করছেন। গত ৮ মাস পূর্বে বড় সাইজের ২৫টি গরু ক্রয় করে লালন পালন করছেন। এ পযর্ন্ত তিনি মাত্র ৫টি গরু বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলার মোগড়া এলাকার মো. মুছা মিয়া মিয়া বলেন, কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ৫টি  গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেন।   কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। গরু কেনা, লালান পালন, খাবার, ওষধসহ অনেক টাকা ব্যয় হয় তার। লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতির কারণে গরু বিক্রি করতে না পারলে অনেক লোকসান গুনতে হবে বলে জানায়।

মো. কাইয়ুম  মিয়া বলেন,কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তিনি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে গরু বিক্রি করছেন। এবছর ৬টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। পশুর রোগ বালাই থেকে রক্ষা পেতে তিনি  নিয়মিত ভাবে উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কার্যালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তিনি আশাবাদি ঈদের আগেই তার ঘরে থাকা গরুগুলো বিক্রি হবে।

আখাউড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. কামাল বাশার  বলেন, এ উপজেলার কৃষক ও খামারিরা দেশীয় পদ্ধতিতে যত্ননিয়ে গরু লালন পালন করছে। চাহিদা অনুযায়ী পশু বেশী রয়েছে। স্থানীয়দের উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মেটানো যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!