গাজীপুর: দেশের তৈরি পোশাক শিল্পকারখানার শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি বিষয়ে জটিলতা, অবশেষে সুরাহা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে পোশাক শ্রমিকেরা বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেতেন। তবে এবার ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির হার বাড়ানোর দাবিতে দেশের পোশাক শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমিকদের বিক্ষোভ দেখা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ দর-কষাকষির পর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। আগের ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশে করা হয়েছে। অর্থাৎ ৪ শতাংশ বৃদ্ধি করে এখন থেকে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট হবে ৯ শতাংশ।
এ দিকে পোশাক শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটা যৌক্তিক পর্যায়ে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি ব্যাপারে তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐক্যমত্য হলেও দেশের বৃহৎ পোশাক শিল্প সমৃদ্ধ জেলা গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের হাজার- হাজার পোশাক শ্রমিকরা মিশ্রপ্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সরেজমিনে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের মৌচাক, টঙ্গী, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর অন্তত ২০ পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া পর। দেশের সকল পোশাক শিল্প কারখানার শ্রমিকেরাই মনে করেছিল। এবার হয়তো গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের কসাই মনোভাব পরিবর্তন হবে এবং শ্রমিকদের ভাগ্য খুলবে। কিন্তু বাস্তবে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। অসংখ্য মালিকেরা শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ না করেই বিভিন্ন অজুহাতে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে অনেক গার্মেন্টস মালিকেরা শ্রমিকদের সামান্য হাজিরা বোনাস ও নাইট বিল বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক মহাসড়কে নামতে বাধ্য করান। তবুও ধন্যবাদ এবার ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির দাবিতে বড় কোন আন্দোলনে পোশাক শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয় নাই।
গাজীপুরের অন্যতম শিল্প গ্রুপ ডিবিএল এর পোশাক কারখানার শ্রমিক সানজিদা আক্তার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি করেছে মালিক পক্ষ এটাকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে এর চলে বেশি ভাল হতো যদি মালিক পক্ষ থেকে এর পাশাপাশি আমাদেরকে কোনা একটা ভাতা প্রদানের ঘোষণা দিতেন। তাহলে কিছুটা হলেও দ্রব্য মূল্যের জাতা কল থেকে কিছুটা হলেও রেহায় পেতাম।
দেশের আরেক বৃহত্তর শিল্প গ্রুপ পলপল গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিক কবির হোসেন বলেন, আমাদের ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি বাড়ানো হয়েছে। তাতে আমরা সাধুবাদ জানাই সরকার ও মালিক পক্ষকে তবে এর চেয়েও শত গুনে খুশি হইতাম এই মহূর্তে যদি আমাদের বেতনটা যদি পূর্ণ মূল্যায়নের ঘোষণা করা হতো। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে শীতকালীন সবজিতে সয়লাব হলেও কোন একটা সবজির দাম কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে না। এই দিকে গার্মেন্টস মালিক ও সরকার নজর দিলে ভাল হতো।
এ দিকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বলেন, পাঁচটি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়েছে ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি। আমরা জানি শ্রমিকেরা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অনেক ব্যয় বহন করছেন।
সেই কথা চিন্তা করেই মালিকেরা ইনক্রিমেন্ট বাড়লোর ব্যাপারে একত্ববাদ প্রকাশ করেছেন। যতটুকুই বেড়েছে তাতেই সন্তুষ্ট থেকে এবার শ্রমিকদের কাজে ফিরে উৎপাদন বজায় রাখা এবং দেশি-বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্রে পা না দিতে আহ্বান জানাচ্ছি।
শ্রমমন্ত্রণালয় ও তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রমতে, চলতি ডিসেম্বর থেকেই নিম্নতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত পোশাক শ্রমিকেরা নিয়মিত ৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এর ফলে শ্রমিকদের জানুয়ারির মজুরির সঙ্গে ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হবে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য এ এন এম সাইফুদ্দিন বলেন, পোশাক শ্রমিকদের যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্বশীল সকলেই অতন্ত্য আন্তরিক। তাদের সঙ্গে আমাদের গার্মেন্টস কারখানার মালিকেরাও আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। কারখানার মালিকেরা সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল দাবি গুলো পর্যায়ক্রমে পুরণ করার চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং কোন ফাঁদে পাড়া দেওয়া যাবেনা।
উল্লেখ্য, ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি বিষয়ে এক বৈঠকে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ দাবি করেন। তবে মালিকপক্ষ দিতে চান ৮ শতাংশ। পরে সবার সম্মতিক্রমে ৯ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ বিষয়ে মালিক,শ্রমিক ও সরকারপক্ষের প্রতিনিধিরা এক যৌথ ঘোষণায় সই করেন। এ সময়ে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহাম্মাদ; জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কবির আহম্মেদ, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম এমাদুর হক, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. হাসিবুজ্জামান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান সিকদার।
এমএস/এসআই
আপনার মতামত লিখুন :