তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর, হাজারো পরিবার পানিবন্দি

  • প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৮:৪৪ এএম
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর, হাজারো পরিবার পানিবন্দি

ঢাকা: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ করেই বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২২ মিটার, যা বিপৎসীমার তুলনায় ৭ সেন্টিমিটার বেশি। এর ফলে তিস্তার পানি এখন প্রবল স্রোতে নিচের দিকে ছুটে চলেছে এবং আশপাশের নিম্নাঞ্চল দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে।

ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল এবং টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চল ও চর গ্রামগুলো ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সন্ধ্যার মধ্যে পানির উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি স্লুইসগেটের মধ্যে ৪৪টি সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সতর্ক অবস্থায় থেকে পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিস্তার পানি বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়েছে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নে। এসব এলাকার বহু গ্রামে নদীর পানি ঢুকে পড়েছে, যার ফলে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় চর গ্রাম ঝাড়সিংশ্বরসহ বেশ কয়েকটি চর এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ধান, ভুট্টা, শাকসবজির মতো মৌসুমি ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, “প্রথমে পানি ধীরে ধীরে ঢুকছিল, কিন্তু এখন স্রোতের গতি ও পানির উচ্চতা দুটোই বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে ক্রমেই ভয়াবহ করে তুলছে।”

এ ছাড়াও, তিস্তার পানি বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও কালিগঞ্জ উপজেলায়। নদীবেষ্টিত চর ও চরের ভেতরের গ্রামগুলোতে হাঁটুসমান পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে অনেকে গবাদিপশু, শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নৌকা বা অন্যান্য মাধ্যমে উঁচু স্থানে সরে যাচ্ছেন।

ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, “গতকাল পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে তা বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে চলে গেছে। উজানের পানি এখনও বাড়ছে, তাই আমরা সব স্লুইসগেট খোলা রেখেছি এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

ওএফ

Link copied!