ছবি: প্রতিনিধি
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে-এমন ঘোষণার পর থেকেই মাঠে নেমেছেন পাবনা-৩ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা। তারা নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি তারেক রহমানের ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করছেন সাধারণ মানুষের মাঝে। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ভোট ও দোয়া চাইছেন তারা। এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচনী উৎসবের আমেজ বইছে।
পাবনা–৩ আসনটি জেলার একটি বৃহৎ আসন। মাস তিনেক আগে কেন্দ্রীয় বিএনপি পাবনা-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষিবিদ ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনকে এই আসনে কাজ করার অনুমতি দেয়। এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে শুরু হয় নানা আলোচনা–সমালোচনা। তুহিন এই আসনের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা ও গণসংযোগ চালালেও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বহিরাগত প্রার্থীকে মানতে রাজি নন। তাদের দাবি, স্থানীয়, বিশেষ করে চাটমোহর উপজেলার কাউকেই ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন দিতে হবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দুইবারের সাবেক এমপি ও চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলহাজ হাসানুল ইসলাম রাজা এবং চাটমোহর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব হাসাদুল ইসলাম হীরা। তারা চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় মোটরসাইকেল শোডাউন, পথসভা, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণসহ নানা কার্যক্রমে ব্যস্ত। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। নেতাকর্মীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বহিরাগত কাউকে তারা মেনে নেবেন না।
এই আসনে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা বেশি হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র। মনোনয়ন পেলে নির্বাচিত হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে, এই আসনে জামায়াতে ইসলামী আগে কখনও সংসদে যেতে না পারলেও এবার তারা নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এগিয়ে। জেলা জামায়াতের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক মাওলানা আলী আসগরকে প্রার্থী ঘোষণা করে তারা আগেই মাঠে নেমেছে।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে পাবনা–৩ আসনে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে স্থানীয় পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে দুইজন এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও তিনজন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে দলের হাইকমান্ডের কাছে স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। পাবনা–৩ আসনের প্রায় প্রতিটি এলাকায় আমার উন্নয়ন কাজ রয়েছে। বাইরের কোনো প্রার্থীকে এই আসনের মানুষ মেনে নেবে না। আমরা চাই চাটমোহরের কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসানুল ইসলাম রাজা বলেন, ‘ধানের শীষের মনোনয়ন এখনো কেউ পাননি। অথচ কেউ কেউ “গ্রীন সিগন্যাল” পেয়েছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা প্রতারণার শামিল। যাদের এই এলাকার মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, তারা এখন এসে সুবিধা নিতে চাইছেন। কিন্তু মানুষ স্থানীয় প্রার্থীই চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জয়ী হলে পাবনা–৩ আসন থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি দূর করব। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিল্পসহ সব খাতে উন্নয়ন ঘটাব।’
মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসাদুল ইসলাম হীরা বলেন, ‘দল এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। আমি নিজের মতো করে কাজ করছি। গত ১৬ বছরে হামলা-মামলার মধ্যেও দলকে টিকিয়ে রেখেছি। আশা করি, দল এসব বিবেচনা করবে। এখন ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, এটা কাম্য নয়।’
অন্যদিকে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান আমাকে পাবনা–৩ আসনে পাঠিয়েছেন। আমি পাবনারই সন্তান। এই অঞ্চল উর্বর ভূমি হলেও উন্নয়ন বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করব।’
এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮০ হাজার ৭২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪০ হাজার ২৭৩ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৯ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৭৬টি।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :