ফাইল ছবি
রাজশাহীতে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে একজন হিজড়াসহ ২৮ জন নারী ও পুরুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগ ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী। উঠতি বয়সের এইচআইভি সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র প্রতিকার।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজশাহীতে যৌনকর্মীর চেয়ে সমকামিতার মাধ্যমে বেশি ছড়িয়েছে এইচআইভি। গত ছয় বছরে এইচআইভিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ জনে। এ সময়ে এইডসে মারা গেছেন আটজন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন পরীক্ষা করান। পজিটিভ হলে তাদের কাউন্সেলিং দেওয়া হয়। রোগীদের বোঝানো হয়, এই রোগ পুরোপুরি ভালো না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।
তবে হাসপাতালে এইচআইভির ওষুধের ব্যবস্থা নেই। রাজশাহী বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) থেকে, যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়। রামেক হাসপাতালেও এইচআইভি আরটি সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চালু হলে রোগীদের আর বগুড়ায় যেতে হবে না।
২০১৯ সালে ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনও পজিটিভ ছিলেন না। ২০২০ সালে ৩২১ জনের মধ্যে দুইজন পজিটিভ। ২০২১ সালে ১ হাজার ৫২৭ জনের মধ্যে আটজন পজিটিভ এবং একজনের মৃত্যু। ২০২২ সালে ২ হাজার ৩১ জনের মধ্যে আটজন পজিটিভ এবং একজনের মৃত্যু। ২০২৩ সালে ২ হাজার ৩৬০ জনের মধ্যে ২৪ জন পজিটিভ, মৃত্যুর সংখ্যা তিন। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৫৩২ জনের মধ্যে ২৭ জন পজিটিভ, মৃত্যুর সংখ্যা তিন। চলতি ২০২৫ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৬ জনের মধ্যে ২৮ জন পজিটিভ এবং একজনের মৃত্যু।
সর্বশেষ দুই বছরের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সমকামিতার মাধ্যমে সংক্রমণ সর্বোচ্চ। ২০২৪ সালে ২৭ জনের মধ্যে ১৬ জন সমকামিতার মাধ্যমে আক্রান্ত, ১০ জন যৌনকর্মীর মাধ্যমে, একজন ব্লাড থেকে। ২০২৫ সালে ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জন সমকামিতার মাধ্যমে, ১০ জন যৌনকর্মীর মাধ্যমে এবং একজন ব্লাড থেকে সংক্রমিত।
পুরুষ আক্রান্ত ২৫, নারী ২ ও হিজড়া ১। এই বছর ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৬০ জন পুরুষ, ৯১৭ জন নারী, ১৬৯ জন হিজড়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পজিটিভ রোগী জানিয়েছেন, নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন। রাজশাহী হাসপাতালে ওষুধ নেই। বগুড়ায় যেতে হয়। তবে সেখানে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়। রামেক এইচটিসি সেন্টারে নিয়মিত কাউন্সেলিং দেওয়া হয়।
রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, এখানে টেস্টিং ও কাউন্সেলিং চালু রয়েছে, ওষুধ নেই। তবে এআরটি সেন্টার চালু হলে রোগীরা এখানে চিকিৎসা ও ওষুধ পাবেন।
এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পার্সন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, এইচআইভি সংক্রমণ ছড়ায় অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ যৌনমিলনের মাধ্যমে, যেমন নারী-পুরুষ এবং পুরুষ-পুরুষের মিলন। এছাড়া মা থেকে শিশুর সংক্রমণও হয়। প্রতিরোধের জন্য কনডম ব্যবহার, যৌনসঙ্গী সীমাবদ্ধ রাখা, রক্ত বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া, ইনজেকশন সুঁই-সিরিঞ্জ একাধিক ব্যবহার না করা জরুরি।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :