চলনবিলে বিনা হালে রসুন আবাদে ব্যস্ত চাষীরা

  • শাহীন রহমান, পাবনা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
চলনবিলে বিনা হালে রসুন আবাদে ব্যস্ত চাষীরা

জমিতে রসুনের কোয়া বুনতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। বুধবার পাবনার চাটমোহর উপজেলার খলিসাগাড়ি বিল থেকে তোলা। ছবি: সোনালীনিউজ

শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত চলনবিল অঞ্চলে চলছে বিনা হালে রসুন আবাদ। বিল থেকে পানি নামার পর কৃষকরা আমণ ধান কাটা শেষে রসুনের চাষ শুরু করেন। খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই এই অঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। রঙে সাদা এবং বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় চলনবিলের রসুন এখন ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত।

প্রতিবছরের মতো এবারও কৃষকরা মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি হলেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। কুয়াশা ঘেরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠের পর মাঠ রসুনের কোয়া রোপণ করা হচ্ছে। পুরুষ ও নারী শ্রমিকের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের দরিদ্র শিক্ষার্থীরাও মজুরির ভিত্তিতে রসুন রোপণে অংশ নিচ্ছেন।

চলনবিল অঞ্চলের পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রসুন চাষ করা হয়ে আসছে। খরচ কম এবং দ্রুত ফলন পাওয়ায় কৃষকদের কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে চলতি বছরে রসুনের বাজার দর কম থাকায় কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে চাটমোহর উপজেলার খলিসাগাড়ি, বোয়াইলমারী, ধানকুনিয়া, চিনাভাতকুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, শত শত নারী-পুরুষ সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করছেন। রোপণকৃত কোয়ার ওপর খড় দেওয়া হচ্ছে, সার ও কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কয়েক মাসের মধ্যে কৃষকরা রসুন ঘরে তুলবেন।

কৃষকরা ছাড়াও এই সময়ে কৃষি শ্রমিকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হন। একজন পুরুষ শ্রমিক প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা, কিন্তু একই কাজ করা নারী শ্রমিক পান ৩৫০-৪০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৩০-৩৫ মণ রসুন উৎপাদন হয়। প্রতি বিঘা রসুন চাষে খরচ হয় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। বাজার দর ভালো থাকলে প্রতি বিঘা থেকে প্রায় লাখ টাকার আয় সম্ভব।

চাটমোহর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৪,৪৫০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ৪৭,৯১৫ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরহাদ নাসিম নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করছি। কম খরচে বেশি ফলন হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে রসুনের আবাদ করছি, তবে এবার বাজার দর কম হওয়ায় শঙ্কা আছে।’

আব্দুর রহিম বলেন, ‘একসময় দিনমজুরি করে সংসার চালাতাম। কিন্তু রসুন চাষের মাধ্যমে জমি কিনেছি। চলনবিলে রসুন ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত।’

খলিসাগাড়ি এলাকায় কাজ করা মহিলা শ্রমিকরা বলেন, ‘এই সময় গ্রামের বাড়িতে তেমন কোনো কাজ থাকে না। আমরা রসুনের কাজ করে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করি। পরে রসুন সংগ্রহ ও বাছাইয়ের কাজও পাই, যা আমাদের ভালো আয়ের উৎস।’

চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিসার কুন্তলা ঘোষ জানান, ‘রসুন চাষ চলনবিল এলাকার মানুষের কাছে প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে জনপ্রিয়। কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করি এবারও লাভবান হবেন।’

এসএইচ 

Link copied!