স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করলেন স্ত্রী

  • মৌলভীবাজার প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০১৭, ০৩:৫৫ পিএম
স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করলেন স্ত্রী

মৌলভীবাজার: জেলার শ্রীমঙ্গল শহরের সুরভী পাড়ায় স্ত্রীর হাতে স্বামী খুনের ঘটনায় স্ত্রী শিরীন আক্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রীকে আটক করেছিল পুলিশ।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে জবানবন্দি দেওয়ার পর মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) আদালতের মাধ্যমে শিরিনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নিহত ফারুকের মামা মো. মাসুক মিয়া বাদী হয়ে শিরিন আক্তার ও তার দুই ভাইকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন জানায় পুলিশ।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে ফারুক ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় তার শিশু সন্তান ফাইজা ঘুমের মধ্যে তাকে বিরক্ত করে। এতে তিনি উত্তেজিত হয়ে স্ত্রী শিরিনকে গালমন্দ করে শিশু বাচ্চাকে নানীর কাছে রেখে আসতে বলে। শিরিন সন্তানকে নানীর কাছে রেখে আসার পর তাকে গালিগালাজ করে ফারুক। উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ফারুক তার স্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে। ওই সময় শিরিন তার পাশে থাকা ‘স্টিলের ট্রে’ দিয়ে স্বামীর মাথায় এলোপাতারি আঘাত করে এবং তার বুকের উপর সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ফেলে ফারুককে হত্যা করে বলে শিরীন তার জবান বন্দিতে স্বীকার করে।’

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, ফারুককে কুপিয়ে হত্যা করে ঘাতক শিরীন প্রথমে গোসলের কাজ শেষ করে হঠাৎ চিল্লা চিল্লি করতে থাকে এবং তার স্বামীকে কে যেন মেরে ফেলেছে বলতে থাকে! এক পর্যায়ে সে নিজেই সেলাই মেশিন, ওয়ারড্রপ, থালাবাসুন, কাপ দিয়ে ঢেকে রাখা লাশ আবিস্কার করে কাঁদতে থাকে।

নিহত ফারুক মিয়া (২৬) গ্রাম নোয়াগাও শ্রীমঙ্গলের ইমানুদ্দিনের ছেলে। সে একজন গাড়ির মেকানিক ছিল। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ৪ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে নাম ফাইজা তাবাসসুম রাকা।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, শিরীনের বাবা একজন রিকশাচালক, তাদের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে। শহরের একটি কলোনিতে থাকা অবস্থায় কয়েক বছর পূর্বে শিরীনকে ফারুক ভালোবেসে বিয়ে করেন। শিরিন যখন স্থানীয় একটি স্কুলে লেখাপড়া করতেন তখন ফারুক তার লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন। বিয়ের পর শহরের সুরভী পাড়ার একটি বাসায় ভাড়াটে থাকতেন তারা। তাদের সংসারে প্রতিনিয়ত ঝগড়া লেগেই থাকতো ফলে স্থানীয়রা তা মিমাংসা করে দিতেন।

এছাড়াও ঘাতক শিরীনের প্রতি ইয়াবা সেবনসহ পরকিয়ারমত নৈতিকস্খলনের অভিযোগ ও উঠে এসেছে স্থানীয়দের থেকে।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পুলিশ ফারুকের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে।

এ ব্যাপারে নিহতের বড় বোন রুবি বেগম মঙ্গলবার অভিযোগ করে বলেছিলেন, তার ভাবী শিরীন আক্তার আরও কয়েকজনকে নিয়ে তার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

অপরদিকে স্থানীয় অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, ফারুকের একটি প্রাইভেট গাড়ি ছিল যা বিক্রি করা হয়েছে গত রোববারে এর বিক্রির টাকা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্য তৈরির এক পর্যায়ে স্ত্রীর দায়ের এলোপাতারি আঘাতে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার বাদ আছর তার নিজ গ্রাম নোয়াগাওয়ে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Link copied!