আমে নয়, এবার গাছেই দেয়া হচ্ছে বিষ ‘কালটার’

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮, ০১:১০ পিএম
আমে নয়, এবার গাছেই দেয়া হচ্ছে বিষ ‘কালটার’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : আমের ফলন বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতিবছর একশ্রেণির ব্যবসায়ী মুখিয়ে থাকে। তারা মালিক না হলেও আমবাগান ইজারা নিয়ে মালিক হয়ে বসে। বাগান কিংবা পরিবেশের ভালোমন্দের কথা তারা ভাবে না।

মূলত কয়েক বছরের জন্য ইজারা নিয়ে এসব ব্যবসায়ী দ্রুত লাভের আসায় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকে। এতে প্রথম দু-তিন বছর খুব ভালো ফলন হয়। প্রতিবছর মৌসুম যেমন থাকুক না কেন, মুকুল ও গুটি আসে। এ লক্ষ্যে এবার আমে নয়, সরাসরি গাছে দেওয়া হচ্ছে বিষ ‘কালটার’। মাত্রাতিরিক্ত কালটার ব্যবহারের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষ।

কালটার হচ্ছে গাছের বৃদ্ধি নিরোধক রাসায়নিক দ্রব্য। এটি তরল ও পাউডার উভয় অবস্থাতে পাওয়া যায়। দেশ ও কোম্পানিভেদে এর নাম ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ভারতের সিনজেনটা কোম্পানি এটি বাজারজাত করে কালটার নামে। থাইল্যান্ড প্যাকলোবুটাজল আর অস্ট্রেলিয়া বাজারজাত করে অসটার নামে।

কৃষিবিদদের মতে, বাংলাদেশে এ ধরনের কেমিক্যাল প্রয়োগের অনুমতি নেই। যদিও বিশ্বের অনেক দেশেই প্যাকলোবিউট্রাজন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এতে তারা আম উৎপাদনে যুগান্তকারী ফলাফল নিয়ে এসেছে। কিন্তু আবহাওয়াগত কারণে দেশে প্যাকলোবিউট্রাজন ব্যবহার নিষিদ্ধ। এখানে এ-জাতীয় রাসায়নিক আম চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। এতে আমের গুণগত মান কমে যায়। স্বাদ ও পুষ্টিমানেও টান পড়ে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ দেশে তা বাজারজাত করার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) প্যাকলোবিউট্রাজন নিয়ে গবেষণা করে। এতে ধরা পড়ে এর বিষক্রিয়া।

অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও চোরাকারবারীদের আনা কালটার ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর অঞ্চলে। পরে বিস্তৃতি ঘটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরেও। লাগাতার কালটার ও সঙ্গে বস্তা বস্তা লবণ ব্যবহারে প্রথম দশ বছরে কয়েক লাখ আমগাছ মারা গেলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নড়েচড়ে বসে।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদ হোসেন জানান, অত্যন্ত গোপনে গাছে দেওয়া হচ্ছে কালটার। তারা বিভিন্ন এলাকার বাগানে বাগানে ঘুরে কালটার ব্যবহারের নমুনা পেয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণাকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রেজা জানান, বেশি ফলনের আশায় মাত্রাতিরিক্ত হারে প্রয়োগ করে কালটার। এতে গাছ দ্রুতই মরে যায়।

চাষি ও গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২০ লাখেরও বেশি আমগাছ আছে। এর অর্ধেকের বেশি গাছের ব্যবহার করা হয়েছে নিষিদ্ধ কালটার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!