টানা ৩ মাস ধর্ষণের পর কাকলির মৃত্যু!

  • টাঙ্গাইল প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৮, ২০১৮, ০৩:৩৩ পিএম
টানা ৩ মাস ধর্ষণের পর কাকলির মৃত্যু!

টাঙ্গাইল: ধনবাড়ীতে অপহরণের পর দফায় দফায় ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইব্যুনালে মামলা করেছেন নিহতের মা হেলেনা বেগম।

এদিকে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি মেম্বার শাজহান ওরফে কহিনুরের নেতৃত্বে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে চার লাখ টাকায় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

এমনকি মামলার বাদী হেলেনা বেগমকে মামলা প্রত্যাহরের জন্যও হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তা না হলে তাকেও তার মেয়ের মতো অবস্থা করা হবে বলে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মামলার বিবরণ ও পারিবরিক সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার চুনিয়া পটল গ্রামের আবদুর রহমানের মেয়ে কাকলি বেগমের পার্শ্ববর্তী বলদিআটা গ্রামের শাহজান আলীর ছেলে লিটন মিয়ার সাথে ২০১৩ সালের ২৮ মে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।

এরই মধ্যে পাশের বাড়ির ছাহের আলীর ছেলে রেজাউল হক (৩০) মাঝে মধ্যেই কাকলি বেগমকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এতে রাজি না হলে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কাকলি বেগম স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি যাওয়ার পথে গৈরাং নামকস্থানে আরও ৭/৮ জন দুর্বৃত্তকে সাথে নিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

অপহরণের পর অজ্ঞাত স্থানে রেখে কাকলি বেগমকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দফায় দফায় ধর্ষণ করে। দীর্ঘদিন পাশবিক, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে কাকলি বেগম নিস্তেজ হয়ে পড়লে মৃত ভেবে গত ৪ এপ্রিল রাতে তাকে তার বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যায়।

এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে এই গৃহবধূ মারা যান।

কাকলি বেগমের মা হেলেনা বেগম জানায়, তার মেয়েকে রেজাউল গংরা অপহরণ করে নিয়ে দীর্ঘ তিন মাস যাবৎ ধর্ষণ করে। মৃত ভেবে কাকলিকে নিস্তেজ অবস্থায় বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যায়।

যারা তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে তিন মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।

কাকলির মা জানান, এ ঘটনার পর পরই ধনবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলেও প্রভাবশালী রেজাউল গংদের চাপে রহস্যজনক কারণে মামলা নেয়নি পুলিশ। ফলে বাধ্য হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি।

কাকলি বেগমের খালাত ভাই আশরাফুল জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য শাজাহান ওরফে কহিনুরের নেতৃত্বে এলাকার মাতাব্বর শফিকুল ইসলাম ওরফে চাঁন মিয়া ও আবদুল মালেকের সহায়তায় সালিশি বৈঠকে অভিযুক্তদের চার লাখ টাকা জরিমানা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, জরিমানার চার লাখ টাকার মধ্যে দুই লাখ টাকা মেয়ের পরিবার এবং বাকি দুই লাখ টাকা মাতাব্বররা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতে চাইলে মেয়ের পরিবার রাজি হয়নি। ফলে মেয়ের পরিবারকে টাকা না দিয়ে ইউপি মেম্বার শাজাহান ওরফে কহিনুর ও আবদুল মালেক মাতাব্বরের নিকট জমা রেখেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউপি মেম্বার শাজাহান ওরফে কহিনুরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাটি খুবই পৈচাশিক। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

ধনাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। তবে আমার জানা মতে, টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছে।

সোনালীনিউজ/জেএ

Link copied!