বিচার বিভাগ ছাড়া আধিপত্যের প্রতিযোগিতায় সব সংস্থা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬, ০৯:৪৫ পিএম
বিচার বিভাগ ছাড়া আধিপত্যের প্রতিযোগিতায় সব সংস্থা

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থা অন্য সংস্থার ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। শুধু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানই নয়, রাষ্ট্রের বিভাগগুলোও এ প্রতিযোগিতার বাইরে নেই।’

রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ, বিভাগ বা সংস্থার সমালোচনা করছেন না উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কেবল বিচার বিভাগই এর ব্যতিক্রম।’ 

আধিপত্য বিস্তার প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘যারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকেন, তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা বেশি মাত্রায় প্রতীয়মান হয়। কিন্তু বিচার বিভাগ কখনো এ প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং করবেও না।’

রাষ্ট্রের বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা সব সময় করে যাচ্ছেন জানিয়ে এস কে সিনহা বলেন, ‘এ জন্য শাসনতন্ত্র আমাদের ওপর যতটুকু দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করেছে, আমরা শুধু ততটুকুই করব। আমি আশা করব, রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগকে সেভাবেই সহযোগিতা করবে।’

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন ২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

রাজনীতিবিদদের প্রসঙ্গে এস কে সিনহা বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক সরকার পাঁচ বছর দেশ শাসন করতে পারবে। কিন্তু যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে না পারে, সেটা রাজনীতিবিদদের জন্য দেউলিয়াপনা।’

সুপ্রিম কোর্টের স্থান সংকটের কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে আবারও আহ্বান জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে এস কে সিনহা বলেন, ‘বিচারপতিদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এ সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরে দুই দফা চিঠি দিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার যদি জেলা আদালতে হতে পারে, তাহলে যুদ্ধাপরাধের হতে বাধা কোথায়?’

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন,‘ত্রয়োদশ সংশোধনীর ফলে অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনকে একটি মহলের খেয়ালখুশি মতো পরিচালনার ব্যবস্থা হয়েছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি জনগণের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের প্রজাতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পরিচয় খর্ব করায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত তা অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। ওই সংশোধনী বাতিল করে গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নির্দেশ প্রদান করে বিচার বিভাগ। দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করতে বিচার বিভাগের অবদান অন্য কোনো বিভাগের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘যে সংবিধান দেশের জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, সে সংবিধানকে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংশোধন করে অপবিত্র করা হয়েছে এবং শহীদদের আত্মার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী এবং সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। পবিত্র সংবিধান থেকে সামরিক আইন তথা সামরিক শাসকদের সংশোধিত ও সন্নিবেশিত বিধানসমূহ মুছে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের এই আদেশের ফলে সামরিক শাসনের সম্ভাবনা চিরতরে নির্বাসিত হয়েছে এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার সুযোগ পরাহত হয়েছে।’

দুই দিনব্যাপী বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন’-এর উদ্বোধনও করেন প্রধান বিচারপতি। যেখানে বিচার বিভাগীয় বিভিন্ন তথ্য থাকবে।

সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা ছাড়াও দেশের নিম্নআদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এ সম্মেলনে অংশ নেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কর্ম-অধিবেশন আগামীকাল রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। কর্ম-অধিবেশনে বেশ কিছু বিষয় আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমে এনজিও’র ভূমিকা’, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ বাস্তবায়নে সমস্যা ও সমাধান’, ‘আদালত প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়’, ‘মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের করণীয়’ এবং ‘আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি প্রয়োগের অপরিহার্যতা’।

এসব বিষয়ের ওপর জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, অতিরিক্ত দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ, চিফ মেট্রোপলিটন ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটররা (পিপি) বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন। সভাপতি ও সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকবেন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন বিচারপতি।

সোনালীনিউজ/এমএন

Link copied!