পুলিশই আগুন দেয় সাঁওতাল পল্লীতে

  • আদালত প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০১৭, ০৯:৫০ পিএম
পুলিশই আগুন দেয় সাঁওতাল পল্লীতে

ঢাকা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য সরাসরি জড়িত এমন প্রতিবেদন দিয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৬৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন দাখিল করেছেন গাইবান্ধা জেলার মূখ্য বিচারিক হাকিম।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন রোববার বিকেলে জমা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিসে এ প্রতিবেদন গ্রহণ করে দেওয়া প্রাপ্তি স্বীকারের একটি কপি হাতে পেয়েছি। ৬৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ১ হাজার ১ পৃষ্ঠার আনুসাঙ্গিক নথি জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি পরবর্তী শুনানির দিনে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চে উত্থাপন করা হবে।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে স্থানীয়দের সঙ্গে সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের একজনসহ তিন পুলিশ সদস্য জড়িত। তবে সেই পুলিশ সদস্যদের নামের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করতে ওইদিন সেখানে কারা কর্তব্যরত ছিলেন সে তালিকা পুলিশের কাছে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সেই তালিকা প্রদান না করায় এই তিন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা যায়নি।

১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। ওই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা।

পরে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে বিরোধপূর্ণ চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে কয়েকশ’ ঘর তুলে বসবাস শুরু করে তারা। গত ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের সময় সাঁওতালদের বাড়িঘরে লুটপাট হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। ওই ঘটনায় নিহত হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে।

সংর্ঘষের পর গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই কল্যাণ চক্রবর্তী ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় চার সাঁওতালকে গ্রেপ্তার করার পর তারা জামিনে মুক্তি পান।

অন্যদিকে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদের ঘটনায় মুয়ালীপাড়া গ্রামের সমেস মরমুর ছেলে স্বপন মুরমু গত ১৬ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন; তার মামলায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

দশদিন পর গত ২৬ নভেম্বর সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত টমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০-৬০০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেন। এছাড়া হাই কোর্টে দুটি রিট আবেদন হয়। ঘটনার প্রায় এক মাস পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা একটি ভিডিওর ভিত্তিতে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সাঁওতাল পল্লীর ভেতরে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়ছেন। কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ঘরে লাথি মারছেন এবং পরে এক পুলিশ সদস্য ওই ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পুলিশের সঙ্গে সাধারণ পোশাকে থাকা আরেকজন আগুন অন্য ঘরে ছড়িয়ে দিতেও সহায়তা করেন।

ভিডিওর একটি অংশে আরও কয়েকটি ঘরে আগুন দিতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট, একজনের পোশাকের পিঠে ডিবি, আরেকজনের পুলিশ লেখা ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে এক রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনে হাই বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত দুই সাঁওতালের অভিযোগ এজাহার হিসেবে নিয়ে পিবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারিক হাকিমের সঙ্গে একই দিনে পিবিআই ওই তদন্ত শুরু করে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Link copied!