শিশুসহ মাকে ১৩ ঘণ্টা আটক: ওসিকে হাইকোর্টে তলব

  • আদালত প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০১৭, ০৫:৪৩ পিএম
শিশুসহ মাকে ১৩ ঘণ্টা আটক: ওসিকে হাইকোর্টে তলব

ঢাকা: দুধের বাচ্চাদের বাইরে রেখে দুই গৃহবধূকে থানায় নিয়ে ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সাব-ইন্সেপেক্টরকে (এসআই) তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৯ মার্চ তাদের আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেলে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রানা কাওসারের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ আদেশ দেন। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ফৌজিয়া করিম ফিরোজ।

গত ১৩ মার্চ ‘বাড়িতে ঢুকে পুলিশের তাণ্ডব’, দুই ‘মা’ ১৩ ঘণ্টা আটক’ শিরোনামে একটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো অভিযোগ না থাকার পরও মাদারীপুরে বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করে দুই নারীকে থানায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এদের একজনের তিন মাস বয়সী এবং অন্য জনের ১৮ মাস বয়সী সন্তান রয়েছে। 

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে, সন্তানদের দুধ খাওয়াতে হবে বলার পরও পুলিশ তাদের টেনে হিঁচরে থানায় নিয়ে যায়।

গত ১৮ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার লক্ষ্ণীগঞ্জ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী। দুই মাকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই থানায় ১৩ ঘণ্টা আটক রাখার পর গভীর রাতে ছাড়া হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করছেন এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, সকাল ১০টার দিকে মাদারীপুর সদর থানায় থাকা একটি জমির মামলা নিয়ে তদন্ত কাজে যান উপপরিদর্শক মাহাতাব হোসেন। যে জমিটি নিয়ে বিরোধ তার পাশের বাড়ির মালিক খালেক বেপারীর ছেলে পনির হোসেনের কাছে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চান। মামলা সর্ম্পকে পনির কিছু জানে না বলে জানান। এতে ওই পুলিশ কর্মকর্তা পনিরকে থাপ্পড় দেন।

এ নিয়ে পনির পুলিশের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এতে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মাহাতাব। পরে ফোন করে সদর থানা থেকে তিনটি গাড়িতে করে পুলিশ এসে পনিরের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। তারা পনির ও তার বড় ভাই-বোনের ঘরের আসবাবপত্র ও হাড়ি-পাতিল, থালা বাসন, এমনকি চুলাও ভেঙে ফেলে।

পুলিশ সদস্যরা পনিরের স্ত্রী ঝুনু বেগম ও তার বড় ভাইয়ে স্ত্রী আকলিমা বেগমকে বেলা ১১টার দিকে টেনে-হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তখন ঝুনু বেগমের তিন মাসের শিশু ও আকলিমার ১৮ মাসের শিশুকে কোল থেকে রেখে যেতে বাধ্য করে। পরে রাত ১২টার দিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে মুচলিকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনায় ওই শিশুদের বাইরে রেখে ১৩ ঘন্টা থানায় আটকে ছিলেন দুই মা।

একটি শিশুর মা আকলিমা বেগম বলেন, ‘আমাকে পুরুষ পুলিশ হাত ধরে হেটে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আমার দুধের বাচ্চার কথা বললেও তারা ‘বাজে’ ভাষায় গালাগালি করে মাদক ও হত্যা মামলায় চালান দেয়ার কথা বলে।’

পনিরের বড় বোন হামিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে পুলিশ ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এসময় ঘরের আলমারিতে থাকা ৬০ হাজার টাকা খোয়া যায়।’

পনিরের মা আরেকজান বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বিনা দোষে আমার ছেলেকে মারধর করেছে পুলিশ। আমাদের রান্না করার চুলাটাও ভেঙে ফেলেছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করি।’ তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই উপপরিদর্শক মাহতাব হোসেন দাবি করেছেন, এমন কিছুই ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘আমি ওই ঘটনার কিছুই জানি না। জেনে-শুনে নিউজ করবেন।’

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো।’

সোনালীনিউজডটকম/এন

Link copied!