প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে যা বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

  • আদালত প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০১৭, ০৪:০৫ পিএম
প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে যা বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক মাসের ছুটি নিয়ে কথা বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। গতকাল  প্রধান বিচারপতির ছুটির কথা তিনিই জানিয়েছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এই উপমহাদেশে হাই কোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের যে ছুটি সে ছুটির পরে আইনজীবীদের সাথে বিশেষ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বার এসোসিয়েশনের সদস্যদের সাথে বিচারপতিরা মিলিত হতেন।

অনেকদিন বন্ধের পর নতুন করে কোর্ট শুরু হলো বন্ধের পরে। আমাদের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিরা অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অন্যান্য আইনজীবীদের সাথে মিলিত হবেন আগে থেকেই নোটিস দেয়া ছিল।

সেই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতেই আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলাম। সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের এ মিলনমেলা, চলেছে ১টা পর্যন্ত।

সৌজন্য সাক্ষাৎ শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। তার আগেই আদালত বসেছিলেন। পাঁচজন বিচারপতি বসেছিলেন। কার্যতালিকার প্রায় ২০টির মত মামলা আমরা নিষ্পত্তি করেছি।

আজকে সোয়া দুইটায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ফুলকোর্ট আহ্বান করেছেন। ফুল কোর্টর বিধান হলো- হাই কোর্টের সমস্ত বিচারপতিগণ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সভায় মিলিত হন। আদালতের কার্যক্রম, অদালতের কার্যতালিকা প্রণয়ন ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার জন্য। যেহেতু ফুলকোর্টের সভায় বিচারপতিরা মিলিত হবেন কাজেই হাই কোর্টে কার্যত কোনো কাজ হবে না, মামলার শুনানি হবে না।

আগামীকাল থেকে সবগুলো কোর্ট নতুন কার্যতালিকা অনুযায়ী কাজ শুরু করবে। যেসব নতুন মামলা তালিকাভূক্ত হবে তার ভিত্তিতে আপিল বিভাগের কাজ পরিচালিত হবে। এছাড়া আপিল বিভাগে কয়টি বেঞ্চ বসবে সে বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।

চাপ প্রয়োগ করে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে আইনজীবী সমিতির এ বক্তব্যের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আইনজীবী সমিতি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কুক্ষিগত হয়ে পড়ার কারণে এ ধরণের কথা বলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তী ক্ষুণ্ণ করছে। একজন বা দুজন বিচারপতির জন্য এদেশের কোনোদিনই বিচার বিভাগের কাজ বন্ধ থাকেনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আইনজীবী সমিতিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনারা জানেন, এর আগে কাদের মোল্লার পরিবারকে নিয়ে বার এসোসিয়েশনে মিটিং করেছে। অনেকগুলো যুদ্ধাপরাধের মামলার ব্যপারে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা হীন প্রচেষ্টা।

প্রধান বিচারপতির হঠাৎ এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেছেন, আমাদের মাননীয় আইনমন্ত্রী বলেছেন, উনি কি কারণ দর্শিয়ে গেছেন। আমরা জানি উনি ক্যন্সারের পেশেন্ট। আগেও উনার ক্যন্সারের ট্রিটমেন্ট হয়েছে। কাজেই এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যক্তিগত ব্যপার। এ সমস্ত বক্তব্য দিয়ে একটি বিশেষ রাজনেতিক দল নানারকম ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। এগুলোর কোনো সারবত্তা নেই, কোনো রকম বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এগুলোকে গোচরে আনারই প্রয়োজন পড়ে না।

প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কারণ তারাই বলেছেন, গতকাল প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে তারা অনুমতি নেননি। কাজেই ওইখানে তাদের আটকানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ প্রধান বিচারপতি কার সাথে দেখা করবেন, কার সাথে কথা বলবেন কি বলবেন না সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার।’

অবকাশোত্তর সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে প্রধান বিচারপতির না থাকার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি থাকবেন কেন? উনিতো গতকালই ছুটিতে চলে গেছেন। ছুটিতে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল রাতেই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে। তাহলে এক অনুষ্ঠানে কি দুইজন প্রধান বিচারপতি থাকতে পারেন? তাছাড়া এটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার।’

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে গত চার-পাঁচদিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই বলেও জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

উনি কোথায় আছেন জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন ‘আমি জানি না। আমার জানার কথা না। তাছাড়া অসুস্থ হলে যদি অনুমতি না দেন তাহলে তো জোড় করে দেখতে যাওয়া যায় না।’

অনুমতি চেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টাই করিনাই। দেশে থাকলে হয়তো চেষ্টা করবো।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Link copied!