ঢাকা: রাজধানীর চানখারপুলে জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী আনাসসহ ছয়জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ সোমবার (১১ আগস্ট) থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হচ্ছে। মামলার প্রধান আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজন পুলিশ কর্মকর্তা। এর মধ্যে চারজন গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আছেন, আর বাকি চারজন এখনো পলাতক।
রোববার (১০ আগস্ট) বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, তা একদিন পিছিয়ে সোমবার নির্ধারণ করা হয়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে শিক্ষা সংস্কার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ৩ আগস্ট বিকেলে চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ সরাসরি গুলি চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আনাসসহ মোট ছয়জন নিহত হন এবং অন্তত কয়েক ডজন আহত হন।
মানবাধিকার সংগঠন ও স্বজনদের অভিযোগ—এই হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত, এবং তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে গণ্যযোগ্য।
মামলাটিতে মোট আটজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতার চারজন হলেন—শাহবাগ থানার বরখাস্ত পরিদর্শক আরশাদ, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন এবং কনস্টেবল নাসিরুল। গতকাল রবিবার তাদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
পলাতক চারজন হলেন— সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। গত ৩ জুন তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা এখনো আত্মসমর্পণ করেননি।
এটি দেশে প্রথমবারের মতো কোনো আন্দোলন-সংক্রান্ত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে মামলা রুজু ও বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়া। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলা ভবিষ্যতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এক নজির স্থাপন করতে পারে।
আজকের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর মাধ্যমে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো, যা জনমনে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে।
ওএফ
আপনার মতামত লিখুন :