ফাইল ছবি
রাজধানীতে অবৈধ সিসা বারের দৌরাত্ম্য কমছে না। ৫ আগস্টের পর থেকে একের পর এক অভিযান চালানো হলেও এসব স্থানে ব্যবসা বন্ধ হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে মালিকানা হাতবদল হয়ে নতুন করে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাড়ছে সিসা আসক্তি, ধ্বংস হচ্ছে ভবিষ্যৎ।
সিসা বারের এই সাম্রাজ্য টিকে আছে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়। সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের মেয়ে বুশরা আফরিন, সাবেক মন্ত্রী মায়ার ছেলে রনি চৌধুরী, এমনকি শেখ পরিবারের সদস্য শেখ ফারিয়াসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি এই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।
গুলশানের কোর্ট ইয়ার্ড বাজার এলাকায় বুশরা আফরিন পরিচালিত ‘দ্য কোর্ট ইয়ার্ড বাজার’ নামের একটি সিসা লাউঞ্জে অভিযান চালায় পুলিশ। এতে বিপুল পরিমাণ সিসা, হুক্কা, মাদকদ্রব্য ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে। পুলিশ জানায়, এটি মূলত ক্যাটারিং ব্যবসার নামে নেওয়া জায়গা, পরে অনুমোদন ছাড়াই রেস্টুরেন্ট ও সিসা লাউঞ্জ হিসেবে চালু করা হয়।
এই ঘটনায় বুশরার স্বামী জাওয়াদ ও পরিচালক আফরোজা বিনতে এনায়েতসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান-বনানীতে অন্তত এক ডজন সিসা বার ফের চালু করার জন্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চলছে। বনানীর ‘মন্টানা লাউঞ্জ’, ‘আল গিসিনো’, ‘ফারেন হাইট’, ‘হাভানা ক্যাফে’, ‘অরা’, ‘সেলসিয়াস’, ‘এক্সোটিক’-সব জায়গাতেই চলছে তদবিরের হিড়িক।
নারকোটিক্স কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান চালিয়ে সিসা বার বন্ধ করা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালীদের তদবিরে নমনীয় হতে হয়। ফলে অভিযান শেষে কিছুদিনের মধ্যেই আবার রাতের অন্ধকারে শুরু হয় বারের কার্যক্রম।
সরকার পরিবর্তনের পর বহু সিসা বারের মালিক হঠাৎ গা ঢাকা দেন। কেউ কেউ নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে হাজির হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পরিচয় বদলে এখন বিএনপির নেতা সেজে চলছেন অনেকে। একাধিক অসাধু আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা ও তথাকথিত সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট জড়িয়ে পড়েছে এই নেশা ব্যবসায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিসা বারের অন্ধকার ঘর ও খুপরির পরিবেশ তরুণ-তরুণীদের বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, সিসা সেবনের পাশাপাশি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে অনেকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, সিসায় ব্যবহৃত উপকরণে উচ্চমাত্রার নিকোটিন থাকে। একটি পাফেই প্রায় ২০০ সিগারেটের সমপরিমাণ নিকোটিন শরীরে প্রবেশ করে। এতে শ্বাসযন্ত্রের ক্যানসার, গর্ভধারণে জটিলতা ও বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বাড়ে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক একেএম শওকত ইসলাম জানিয়েছেন, প্রভাবশালী যত বড়ই হোক, অবৈধ সিসা বার চালাতে দেওয়া হবে না। অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত রয়েছে, পাওয়া মাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :