ফাইল ছবি
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি সাইটে ভিডিও প্রকাশের অভিযোগে বান্দরবানের একটি রিসোর্ট থেকে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন খান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চট্টগ্রামের আজিম ও মানিকগঞ্জের বৃষ্টি। কয়েক বছর ধরে তারা যৌথভাবে পর্নোগ্রাফিক ভিডিও তৈরি করে বিদেশি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করছিলেন। সাইবার গোয়েন্দাদের মতে, আন্তর্জাতিক পর্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের কনটেন্ট লাখোবার দেখা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সাইবার গোয়েন্দারা জানান, কিছুদিন ধরে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ছিল। বিশেষ সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট ট্রাফিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বান্দরবানে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী মাধ্যম দ্য ডিসেন্ট-এর তথ্যে উঠে এসেছে, ‘বি’ (ছদ্মনাম) নামে পরিচিত নারী ২০২৪ সালের মে মাসে প্রথম ভিডিও প্রকাশ করেন। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি বিশ্বের শীর্ষ ১০ পারফর্মারের তালিকায় উঠে আসেন। তাদের ভিডিওর ভিউ সংখ্যা ২৬৭ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ২ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে, যেখানে নতুন ভিডিওর লিংক, আয়ের হিসাব ও রেফারেল অফার দেওয়া হতো। এক বছরে তারা অন্তত ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ আয় করেছেন বলে ধারণা করছে সাইবার ইউনিট।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, আজিম তৃতীয় শ্রেণি ও বৃষ্টি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তারা দুজনই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের জীবনযাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন আসে-বিলাসবহুল পোশাক, দামি স্মার্টফোন ও ভ্রমণচিত্র সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতেন তারা।
চট্টগ্রামে আজিমের বাড়ি প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে, আর বৃষ্টির পরিবার জানায়, তারা বহুদিন আগে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে বসে আন্তর্জাতিক পর্ন কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের এই ঘটনা শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, সমাজের নৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার নতুন দিকও তুলে ধরছে। দ্রুত অর্থ উপার্জনের প্রলোভনে তরুণদের একটি অংশ অনলাইনের অন্ধকার জগতে ঢুকে পড়ছে-যা এখন সাইবার অপরাধ দমন সংস্থার বড় উদ্বেগের কারণ।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন খান জানান, বাংলাদেশে বসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এমন কনটেন্ট প্রচার দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ভবিষ্যতে অনুরূপ কর্মকাণ্ড বন্ধে বিশেষ নজরদারি ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :