বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ধার্য করা হবে বলেও জানান তিনি।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা এই মামলার অন্যান্য অভিযুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বর্তমানে রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এই মামলার প্রসিকিউশনে নেতৃত্ব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম। অপরদিকে, রাজসাক্ষী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের জবানবন্দিতে আমরা পূর্ণাঙ্গ ও সত্য তথ্য পেয়েছি। প্রসিকিউশন বিশ্বাস করে, তার সাক্ষ্য মামলার সত্যতা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামাল নিজেদের পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ না করায় ট্রাইব্যুনাল তাদের জন্য অ্যাডভোকেট আমির হোসেনকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়।
যুক্তিতর্কে তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল, ততক্ষণ তা বৈধ ছিল। তবে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন সাংবিধানিকভাবে বৈধ ছিল না।”
তিনি আরও দাবি করেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তাই তাদের খালাস দেওয়া উচিত।
গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়।
পরে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য উদঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার আবেদন জানান। ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি মঞ্জুর করে তাকে রাজসাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর একটি গুম ও হত্যার অভিযোগে, অপরটি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় কর্মী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের বিচার বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।
এম
আপনার মতামত লিখুন :