তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে দায়ের করা আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চূড়ান্ত শুনানির চতুর্থ দিনের কার্যক্রম চলছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।
এদিন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে আদালত আজকের দিন ধার্য করেছিলেন।
শুনানিতে শিশির মনির বলেন, “আজ থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এখনো সবাই মনে করছেন, এই ব্যবস্থাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ফর্মুলা।”
তিনি আরও বলেন, “যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে, তা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। সংসদীয় কমিটিও এই ব্যবস্থাকে বাতিল করতে চায়নি, কিন্তু এক ব্যক্তির ইচ্ছাতেই এটি বিলুপ্ত করা হয়। ফলস্বরূপ দেশে একনায়কতন্ত্রের পথ সুগম হয়।”
শিশির মনিরের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর থেকে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজজীবনে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “যদি নির্বাচনব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করতে হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক ফর্মুলায় ফিরে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
তিনি আদালতের প্রতি আহ্বান জানান, যেকোনো আদেশ যেন জুলাই সনদে প্রস্তাবিত সংস্কার প্রক্রিয়া ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার আলোচনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৯৯৮ সালে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়, যা ২০০৪ সালে খারিজ করা হয়। পরে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়।
এরপর একই বছরের ৩০ জুন সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়।
এই রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন।
এম
আপনার মতামত লিখুন :