হাসিনার যে সিদ্ধান্তে গভীর সংকটে পড়ে দেশ, রহস্য প্রকাশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ০২:০৮ পিএম
হাসিনার যে সিদ্ধান্তে গভীর সংকটে পড়ে দেশ, রহস্য প্রকাশ

ফাইল ছবি

দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক মহলের প্রায় সর্বসম্মত মতামত উপেক্ষা করে এই ব্যবস্থা তুলে দেন। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আদালতের চার বিচারপতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ওপর ভর করেছিলেন সরকার। সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চের চার বিচারপতি-এবিএম খায়রুল হক, মো. মোজাম্মেল হোসেন, এসকে সিনহা চৌধুরী ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন-ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করেন। পরে পর্যায়ক্রমে এই চারজনের তিনজনই প্রধান বিচারপতি হন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বৈধতা নিয়ে ১৯৯৯ সালে রিট করা হয়। হাইকোর্ট ২০০৪ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করলেও ২০১১ সালে আপিল বিভাগ ৪-৩ ভোটে তা বাতিল করে। রায়ের বিরুদ্ধে থাকা তিন বিচারপতি-আবদুল ওহাব মিঞা, নাজমুন আরা সুলতানা ও মোহাম্মদ ঈমান আলী-মত দেন যে এই ব্যবস্থা জনগণের আন্দোলনের ফসল এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য অপরিহার্য। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল আরও দুইটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে, কিন্তু সরকার সে নির্দেশনা বিবেচনায় নেয়নি।

ইস্যুটির গুরুত্ব বিবেচনায় আদালত আটজন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তাঁদের মধ্যে সাতজনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখাকে যুক্তিসংগত বলে মত দেন। এর মধ্যে পাঁচজন ব্যবস্থা হুবহু রাখার পক্ষে, দুইজন সংস্কারের পক্ষে এবং মাত্র একজন, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, বাতিলের পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও ব্যবস্থাটি রেখে দেওয়ার পরামর্শ দেন। অথচ আদালত এই মতামতগুলো উপেক্ষা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন।

২০১০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ১৫ সদস্যের বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। ১০ মাসে ২৬টি বৈঠক করে কমিটি ১১৪ জনকে আমন্ত্রণ জানায়, যার মধ্যে ১০৪ জন মতামত দেন। প্রথমে কমিটি তিন মাসের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রেখে সংশোধনীর প্রস্তাব দিলেও ৩০ মে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলায়। একক নির্দেশে কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত সুপারিশ দেয়।

১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয় এবং তিনটিই আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীতে এই ব্যবস্থা বাতিলের পর অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনই বিতর্কের জন্ম দেয়-২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ভাষায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল না হলে দেশ আজকের এই রাজনৈতিক সংকটে পড়ত না। তাঁর মতে, পরিকল্পিতভাবেই নির্বাচনকে “নির্বাসনে পাঠাতে” এই ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতকে ভর করে আদালতের রায়, জনমত উপেক্ষা, সংসদীয় কমিটির হঠাৎ মত পরিবর্তন-সব মিলিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পথ তৈরি হয়। আর সেই সিদ্ধান্তই আজকের রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রধান কারণ হিসেবে সামনে আসছে।

এসএইচ 
 

Link copied!