ফাইল ছবি
গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সোমবার এই অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে নতুন আইন কার্যকর হলো। এতে গুমের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। গুমকে জামিন ও আপস অযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য বা সরকারি কর্মচারী কেউই দায় এড়াতে পারবেন না; গুমের আদেশ বা অনুমতি দেওয়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সমানভাবে দায়ী থাকবেন।
আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা স্বাধীনতা হরণের পর সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী বা বাহিনীর সদস্য যদি বিষয়টি অস্বীকার করেন বা তথ্য গোপন করেন এবং এর ফলে ব্যক্তি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে তা গুম হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে।
গুম হওয়া ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে অথবা গুমের পাঁচ বছর পরও জীবিত বা মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা না গেলে দোষীকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। পাশাপাশি গুমের প্রমাণ গোপন, নষ্ট বা বিকৃত করা কিংবা গোপন আটককেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবহার করলে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা অন্য কোনো অজুহাত গুমের দায় থেকে কাউকে রক্ষা করতে পারবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হলেও দায়ী ব্যক্তিকে মূল অপরাধীর মতোই শাস্তি পেতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক হলেও বিচার প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না।
গত ৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এই আইনকে ঐতিহাসিক অভিহিত করে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে গুম প্রতিরোধে কঠোর ও কার্যকর কাঠামো তৈরি হয়েছে।
গুম কমিশনে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার অভিযোগ এসেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা চার হাজারের মতো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
নতুন আইন কার্যকর হওয়ায় গুমের মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার আরও জোরালো রূপ পেল।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :