ফাইল ছবি
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় মা-মেয়ে হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল না, বরং আগের দিনের চুরির ঘটনার জেরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে গৃহকর্মী আয়েশা। গতকাল বুধবার তাকে ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার আগের দিন আয়েশা বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করে। গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ বিষয়টি টের পান। এতে সন্দেহের মধ্যে পড়েন আয়েশা। ঘটনার দিন আয়েশা যখন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন লায়লা তাকে ধরে ফেলেন। পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিলে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে আয়েশা সঙ্গে রাখা ছুরি দিয়ে লায়লাকে উপর্যুপরি আঘাত করে।
এই দৃশ্য দেখে লায়লার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। মা-মেয়ে দুজনেই ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা বলেন, হত্যার কারণ হিসেবে চুরির ঘটনাই সামনে এসেছে। তবে এর বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, আয়েশা দাবি করেছে, তার চুরির পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু হত্যার ইচ্ছা ছিল না। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সে বাসা থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু সঙ্গে নিয়েছিল। হত্যায় ব্যবহৃত আরেকটি ছুরি ওই বাসাতেই ছিল। হত্যার পর আয়েশা আসাদগেট হয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিজের বাসায় যায়। রাতে সেখান থেকে মায়ের বাসায় ওঠে। পরদিন ঝালকাঠির নলছিটিতে দাদাশ্বশুরের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে। পুলিশ সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে, গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেওয়ার সময় নিজের পরিচয় নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল আয়েশা। সে জানায়, তার মা–বাবা অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছে। কিন্তু তারা জীবিত। নিজের শরীরে পোড়া দাগ দেখিয়ে সে বলেছিল, ওই আগুনে সে দগ্ধ হয়েছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদে বলে, ২০১৭ সালে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়েছিল সে।
আয়েশা আরও দাবি করেছে, সে জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। কিন্তু পুলিশ তথ্য যাচাই করে জানায়, দেড় বছর আগে ক্যাম্পে ভাড়া থাকলেও বর্তমানে হেমায়েতপুরে স্বামী রাব্বির সঙ্গে থাকে। তাদের দুই বছর বয়সী একটি সন্তানও রয়েছে।
মা-মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার এই ঘটনায় নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। পুলিশ বলছে, আয়েশার দেওয়া তথ্য ও ঘটনাস্থলের আলামত মিলিয়ে তদন্ত এগোচ্ছে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :