টাকার টানাটানি কমছে ব্যাংকে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০৪:৫১ পিএম
টাকার টানাটানি কমছে ব্যাংকে

ঢাকা : তফসিলি ব্যাংকগুলোর টাকার টানাটানি কিছুটা কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কিছুটা বিধিনিষেধ এসেছে নতুন অর্থবছরে। আরোপ করা হয়েছে উৎসে কর। একই সঙ্গে রপ্তানির চাপও কমেছে অনেকটা। বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য সরকারের ডলারের চাহিদাও কমেছে।

অপরদিকে ব্যাংকগুলোর আমানত বাড়তে শুরু করেছে। এসব সূচকের ওপর ভর করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কিছুটা কমেছে। আগের তুলনায় স্বস্তিতে ব্যাংকগুলো। তবে এখনো বেশ কিছু ব্যাংককে ঘিরে রেখেছে এ সংকট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকের আমানত পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে না। এটি বাড়া ও কমার মধ্যেই থাকবে।

তবে সরকার ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) উদ্যোগে সুদহার নির্ধারণ করার পর আমানতের নড়াচড়া আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। বিএবির সিদ্ধান্ত মেনে গত বছরের জুলাই থেকে আমানতে ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদের ঘোষণা দেয় ব্যাংকগুলো।

এ সময় সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের সুদহারও ৬ শতাংশ ঠিক করে দেওয়া হয়। তবে সব ব্যাংক তা মানেনি। এরপরই আমানত নিয়ে টানাটানি শুরু হয়।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোতে এখনো উচ্চ সুদেই গ্রাহকদের থেকে আমানত সংগ্রহ করছে। এখনো এক ব্যাংকের গ্রাহকের আমানত সুদ বাড়িয়ে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আরেক ব্যাংক।

সম্প্রতি এক্সিম ব্যাংকের একজন বড় আমানতকারীর অর্থ ১১ শতাংশ সুদ দিয়ে অন্য একটি ব্যাংক নিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থবছরের শুরুর দুই মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৮৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বরাবরের মতো এবারো তৈরি পোশাকের ওপর ভর করে রপ্তানি আয়ে এই সাফল্য এসেছে। মোট রপ্তানির ৮৫ দশমিক ১৫ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে।

অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে আশানুরূপভাবে ঋণ বাড়তে পারেনি। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরো কমেছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গত জুলাইয়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের মাস জুনে যা ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

২০১৩ সালের জুনের পর কোনো মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এত কমতে দেখা যায়নি। ওই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি ঋণের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাড়ানো হয়েছে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর)। এর ফলে ব্যাংকগুলো বিদ্যমান সীমার থেকে আরো বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর আগ পর্যন্ত ৬ মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করত বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ ৬ মাসের মুদ্রানীতিতে গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে জুন নাগাদ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। আর শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য এই সীমা দাঁড়াবে ৯০ শতাংশ।

শুক্রবার পর্যন্ত কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের সাড়ে ৮৩ শতাংশ বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। আর শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো ৮৯ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারত।

ব্যাংকগুলোর তথ্যানুযায়ী, গত জুনে ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১০ লাখ ৮৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, জুলাইয়ে তা কমে হয় ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে আমানত বেড়ে হয় যথাক্রমে ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৮ কোটি টাকা। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।  

হঠাৎ করেই ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে এ খাতের সৃষ্ট তারল্য সংকটও কেটে যাচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ব্যাংকগুলোর আমানত বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, এ বছরের শুরুতেও ব্যাংক থেকে আমানত চলে যাচ্ছিল। কোনো কোনো ব্যাংক আমানতে সুদহার বাড়িয়েও সেভাবে আমানত বাড়াতে পারছিল না। আমানতের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছিল সঞ্চয়পত্রে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এক বছরে (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন) পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত বেড়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৯ মাসে বাড়ে ৬০ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। আর শেষ ৩ মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোর আমানত কিছুটা কমেছিল আস্থার সংকট থেকে। সেটি কাটতে শুরু করেছে। তবে এখনো তারল্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বেশ কিছুদিন ধরে আমানতে সুদহার বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর প্রভাব কিছুটা পড়েছে আমানত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে।

এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সঞ্চয়পত্র কেনায় কড়াকড়ি ছাড়াও ব্যাংকগুলো আমানতে আকর্ষণীয় সুদহার ঘোষণা করার পর ব্যাংকে নতুন আমানত আসছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!