অবন্টিত লভ্যাংশের টাকা বিশেষ ফান্ডে দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ১০:৫৮ এএম
অবন্টিত লভ্যাংশের টাকা বিশেষ ফান্ডে দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ফাইল ছবি

ঢাকা: ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধান অনুসারে ব্যাংক হিসাবধারীর অনুমোদন ছাড়া অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ না থাকায় অবণ্টিত লভ্যাংশের অর্থ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে স্থানান্তরের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইপিআরএ) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএসইসির অনেক রেগুলেশন কোম্পানি আইন ও ব্যাংক কোম্পানি আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে ওই জায়গায় বিএসইসির আইন পরিপালন করতে পারবে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ এদের প্রধান রেগুলেটর হলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

 বিএসইসির রেগুলেশন অনুযায়ী পুঞ্জিভূত লোকসানি প্রতিষ্ঠান বর্তমান বছরের আয় দিয়ে লভ্যাংশ দিতে পারবে। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী এই ধরনের প্রতিষ্ঠানলভ্যাংশ দিতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এটাই বাস্তবায়ন করতে চায়। 

অন্যদিকে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নকে সামনে রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এসইসি কমিশন। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর তারা। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিশেষ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এই ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবন্ঠিত লভ্যাংশ দিতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের ভাষায় এটি গ্রাহকদের আমানত। ফলে গ্রাহকদের আমানত রক্ষায় তারা বদ্ধ পরিকর। বিষয়টি চলতি বছরের ১৬ জুন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজকে (বিএপিএলসি) চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিএসইসি বলছে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা প্রয়োজন। ফলে বিএসইসির আইনকে বাস্তবায়ন করার জন্য সকল রেগুলেটরদের সহযোগিতা চায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নিয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (ইডরা) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন জানান, সকলের সুবিধার্থে বিমা কোম্পানির সকল পরিচালকদের একটি ডাটা বেইজ করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনে এটি ব্যাবহার করতে পারবে।

সভার বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ  বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা এগিয়ে নিতে রেগুলেটরগুলো নিয়মিত সমন্বয় সভা করে থাকে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির অনেকগুলো বিষয়ে আলাপ হয়েছে। বিভিন্ন আইন ও রেগুলেশনের বিষয় উঠে এসেছে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সকলের সমন্বয়ে আমরা দেশের আর্থিক খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আমরা একটি ফান্ড গঠন করতে চাই। এই ফান্ডের টাকা আসবে অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার। আশা করছি এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা যাবে।

এদিকে, ইতোমধ্যে বিশেষ ফান্ডের জন্য পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখায় এই হিসাব খোলা হয়েছে। এই হিসাবে অনেকই অবন্ঠিত লভ্যাংশ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান, স্টক ব্রোকার এবং স্টেক ডিলার। এই জন্য ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির সকল অবণ্টিত লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এই তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোনো সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে।

তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্নিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার প্রদান বা ধার গ্রহণ করা হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি।

নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড।

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Link copied!