দুই দিনের টানা বৃষ্টি

পানির নিচে কৃষকের ৩০ কোটি টাকার আলু

  • আজাদ ফারুক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২১, ০৬:৫৪ পিএম

ঢাকা : দেশের সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে খ্যাত মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের চোখে এখন কষ্টের পানি। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে সবকটি উপজেলার আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার আলু চাষী এখন বিপদগ্রস্ত, টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। চাষিরা বলছেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যে যারা আলুর বীজ রোপণ করেছিলেন, তারা বেশ ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন। 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার মুন্সীগঞ্জে ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর, চঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯ হাজার ৯০০ হেক্টর, সিরাজদিখান উপজেলায় ৯ হাজার ৩৬০ হেক্টর, লৌহজং উপজেলায় ৪ হাজার ১১০ হেক্টর, শ্রীনগর উপজেলায় ২ হাজার ২৬০ হেক্টর এবং গজারিয়া উপজেলায় ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হওয়া কথা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ আলু রোপন করা হয়েছে। 

পানির নিচে কৃষকের আলু

এ বিষয়ে চঙ্গিবাড়া উপজেলার এক আলু চাষী সোনালীনিউজকে জানান, তিনি প্রায় ২০ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ৯-১০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। গত বছর আমাদের লস হয়েছে। ভাবছি এবার আলু চাষ করে লাভবান হব, এ বছর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছি, কিন্তু এ বছর পুরাটাই শেষ হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছি। এ অবস্থায় সরকার যদি আমাদের কিছু সাহায্য করে তাহলে আমাদের উপকার হয়। না হয় আমাদের আর কোন উপায় থাকলো না।

আলু চাষীরা জানান, উপজেলার বেশিরভাগ জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরেও বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে কৃষকরা আলু রোপণের জমি থেকে পানি সেচের মেশিন লাগিয়ে জমির পানি নিষ্কাশন করবে। কিন্তু জমি নিচ হওয়া এই পানি বের হওয়ার কোন অবস্থা নেই। ফলে কৃষকের শতভাগ আলু নষ্ট হয়ে যাওয়া একটা আশঙ্কা করছেন তারা। এতে করে মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের প্রায় ২০-৩০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে। 

পানির নিচে কৃষকের আলু

এদিকে সিরাজদীখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আলু চাষী জাকির হোসেন বাবু সোনালীনিউজকে বলেন, ‘এবার আমি সাড়ে ৯ হেক্টর জমিতে আলুর বীজ লাগিয়েছি। সার, শ্রমিক খরচ ও জমি চাষ খরচসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে আমার সব জমিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। লাভের আশায় লগ্নি করে এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার এনে আলু চাষ করেছিলাম, কিন্তু বৃষ্টি আমার সব কিছু শেষ করে দিল।’

উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রাণী সোনালীনিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ আলু রোপন করা হয়েছে নিম্নচাপ এবং অসময়ে বৃষ্টির কারণে পানি ধারা সব জমির ক্ষেতই আক্রান্ত হয়েছে। আলু চাষীদের ক্ষতি হয়েছে। যে সব জমিতে আলুর গাছ বা লতাপাতা গজিয়েছে সেই জমিতে ক্ষতি হওয়ার পরিমাণ কম। আর যেসব জমিতে সপ্তাহখানের মধ্যে বীজ লাগিয়েছে তাদের ক্ষতির পরিমান বেশি। তাছাড়া তাৎক্ষনিক সমাধানের জন্য আমাদের কৃষি অফিসের অনেক লোক মাঠপর্যায়ে কাজ করছে।

পানির নিচে কৃষকের আলু

ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালীনিউজকে তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো না হওয়া পর্যন্ত কিছু বোঝা যাবে না। এ ক্ষেত্রে যে জমি গুলোতে পানি বের করা গেছে, আর যেসব জমিতে রোপ হয়নি, আর যে গুলো পুরোটায় ক্ষতি হয়েছে সব গুলো ক্যাটগরি অনুযায়ী ভাগ করা হবে এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। তবে প্রায় ২০-৩০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

আলু চাষিদের ক্ষতির হওয়া তাদের সহযোগী করার বিষয়ে শান্তনা রাণী সোনালীনিউজকে আরও বলেন, আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো তারা ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সহযোগীতা করবেন।

এছাড়া উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে আমরা সহযোগীতাই চাইবো। মোট কথা যেখান থেকে সহযোগীতা পাওয়া যায় আমরা সহযোগীতা নেবো। 

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!