ঢাকা: পেট্রোবাংলা এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি সাশ্রয় হবে, ঘাটতি কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঘাটতি সামাল দিতে এলএনজি আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য অনেকদিন ধরেই দেন দরবার চলছিল।
বিদায়ী অর্থবছরে গ্যাসে ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয় ৬ হাজার কোটি টাকা। ৮২ কার্গো এলএনজি আমদানি বিবেচনা করলে ওই ভর্তুকি ঠিক ছিল। কিন্তু গ্যাসের ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে ৯৮ কার্গো আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এতে করে ঘাটতি ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে কারণে ঘাটতি সামাল দিতে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট (প্রাক্কলিত) ৭ হাজার কোটি টাকা প্রত্যাহারের দিকে তাকিয়ে ছিল পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশীয় উৎস থেকে পাওয়া গ্যাসের গড় মূল্য দেখা যাচ্ছে ৬.০৭ টাকা, আর ২৫ শতাংশ চড়া দামে আমদানির পর দর দাঁড়াচ্ছে ২৯.৭২ টাকা। গড় বিক্রয় দর রয়েছে ২২.৬৪ টাকা, এতে করে ঘনমিটার প্রতি ৭ টাকা ৮ পয়সা হারে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ২৫ শতাংশ আমদানি করতে গিয়েই দাম সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে ৭০ শতাংশ আমদানির পর কী দাঁড়াবে সহজেই অনুমেয়।
শেভরন বাংলাদেশকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম দেওয়া হয় ২.৭৬ ডলার, আর টাল্লোর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ২.৩১ ডলার। বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ৩টি কোম্পানির কাজ থেকে গ্যাস কিনে থাকে পেট্রোবাংলা। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কেম্পানির ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিকে প্রতি হাজার ঘনফুটের দাম দেওয়া হয় ২৮ টাকার মতো, বাপেক্সকে দেওয়া হয় ১১২ টাকার মতো। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম পড়েছে ১০.৬৬ ডলার ও ওমান থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছে ১০.০৯ ডলার।
এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে ২৮০০ মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ কমে আসায় অনেক কূপেই উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে ১৮৭০ মিলিয়নে নেমে এসেছে দেশীয় উৎপাদন। বিদায়ী বছরে ২৫ শতাংশ গ্যাস আমদানি করা হয়েছে, দেশীয় উৎস থেকে যোগান এসেছে ৭৫ শতাংশ। ২০৩০ সালে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ ৩০ শতাংশে নেমে আসবে, আর আমদানির অনুপাত বেড়ে ৭০ শতাংশ হবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা।
বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ নিয়ে নানা রাজনীতি বিদ্যমান। এক সময় বলা হলো গ্যাসের ওপর দেশ ভাসছে, আবার আরেক সময় বলা হলো গ্যাস নেই আমদানি করতে হবে। এই রাজনৈতিক খেলার কারণে অনুসন্ধান কার্যক্রম এখনও তিমিরেই বলা চলে। ১৯৯৫ সালের জ্বালানি নীতিমালায় বছরে ৪টি অনুসন্ধান কূপ খনন করার কথা বলা হয়। কিন্তু কোনো সরকারেই সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছেও ঘেঁষতে পারেনি।
তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার জ্বালানি খাতকে ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করেছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতের বাজেট বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে ২ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, সরকার নিজস্ব উদ্যোগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৭-২৮ অর্থবছরের মধ্যে বাপেক্স কর্তৃক জরিপকাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। মধ্যমেয়াদে বাপেক্সের রিগ দিয়ে ৬৯টি কূপ খনন ও ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো, ২০২৮ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কূপ খননের ওই পরিকল্পনা উচ্চাভিলাসী মনে করা হলেও বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :