ক্ষুব্ধ স্টেকহোল্ডাররা

কন্টেইনারের তীব্র জটে দণ্ডভাড়া দ্বিগুণ

  • কামরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬, ০৬:৪৩ পিএম
কন্টেইনারের তীব্র জটে দণ্ডভাড়া দ্বিগুণ

চট্টগ্রাম: বন্দরের ইয়ার্ডে পুরো ভর্তি কন্টেইনারের (এফসিএল) সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার বেশি হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে দ্রুত ডেলিভারি। এ কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বিগুণ হারে আরোপ করেছে দণ্ড ভাড়া ( পেনাল রেন্ট)। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) থেকে আদায় করা হচ্ছে দণ্ডভাড়া। এ ঘটনায় বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম ইয়ার্ডে এফসিএল কন্টেইনারের ধারণ ক্ষমতা ২৪ হাজার ১০৫ টিইইউ। সে ক্ষেত্রে আজ বৃহস্পতিবার ২ হাজার ৫শ ১৬ টিইইউ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৬২১ টিইইউতে। এ কারণে তীব্র স্থান সঙ্কটে ইয়ার্ডে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমদানিকারকদের বারে বারে অনুরোধ করা সত্ত্বেও, দ্রুত ডেলিভারি নিচ্ছেন না তারা। এ পরিস্থিতিতে ফ্রি টাইমের পর থেকে স্টোর রেন্ট দ্বিগুণ হারে আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজ থেকে ইয়ার্ডে কন্টেইনার নামার পর প্রথম চারদিন ফ্রি টাইম হিসেবে গণ্য হয়। এর মধ্যে ডেলিভারি নেয়া হলে কোনো স্টোর রেন্ট দিতে হয় না। তবে ২০ ফুট কন্টেইনারের জন্য পরবর্তী প্রথম ৭ দিনে ৬ ডলার করে, এরপর ৮ দিন থেকে ২০দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ১২ ডলার করে এবং তারপর থেকে প্রতিদিন ২৮ ডলার করে নির্ধারিত স্টোর রেন্ট পরিশোধ করতে হয়।

তবে আজ থেকে এই স্বাভাবিক হার বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে। এই দণ্ডভাড়া বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে বর্তমানের স্টোর রেন্ট ৬ ডলারের জায়গায় ১২ ডলার, ১২ ডলারের রেন্ট বেড়ে হবে ২৪ ডলার। একইভাবে ৪০ ফুট কন্টেইনারের রেন্টও হবে দ্বিগুণ।

এ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, তারা সব সময় ফ্রি টাইমের মধ্যেই তাদের কাঁচামালের ডেলিভারি নিতে চান। কিন্তু বন্দরে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা সম্ভব হয় না। যে সমস্যাটা বন্দর কর্তৃপক্ষের। এ জন্য আমদানিকারদের ওপর দণ্ডভাড়া আরোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

পোশাকশিল্প মালিকারা আরো অভিযোগ করেন, বন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ফ্রি টাইমের মধ্যে অনেকাংশে এফসিএল কন্টেইনার ডেলিভারি নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া যেসব চালানে এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে রেডমার্ক হয় সেসব ফাস্ট এক্সামিনেশন করতে হয়। এভাবে কাস্টমস ও বন্দরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্নসহ ডকুমেন্টেশনেই অতিরিক্ত কালক্ষেপন করতে হয় অন্তত চারদিন। সে কারণে আমাদানি পণ্যের ফ্রি টাইম মাত্র চারদিন হওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।

এ ব্যাপারে এক শিল্পপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্দর যদি ব্যবসা খাত হয় তাহলে এটাকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতো চালাতে হবে। আর যদি সেবা খাত হয়ে থাকে তাহলে সেবাখাতের মত করেই পরিচালনা করতে হবে। বিশ্বের প্রধান প্রধান বন্দরগুলোর কোনোটাই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবেপরিচালিত হয় না।

মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এ এম সাহবুব চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, জাহাজের হুক পয়েন্ট থেকে আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) কন্টেইনার পাঠানো হলে আমদানিকারকরা কম সময়ের মধ্যে ডেলিভারি নিতে পারতো। কিন্তু তা না হওয়ায় ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট তৈরি হয়। এটা পদ্ধতিগত সমস্যা। এরজন্য আমদানিকারকদের কাছে দণ্ডভাড়া আদায় একেবারেই যুক্তিহীন।

বেসরকারি আইসিডির নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে জানান, বন্দর ইয়ার্ড থেকে কন্টেইনার আনতে প্রচুর সময়ক্ষেপণ হয়। কন্টেইনার স্ক্যানিং করাতে ঝামেলা অনেক। এর আগে নিতে হয় পিকআপ টিকেট। কন্টেইনার কোথায় আছে তার সন্ধান নিতেও সমস্যা। আর যখন তা পাওয়া যায় তখন যন্ত্রপাতির সংকট অথবা অপারেটর থাকে না।

তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের অন্যতম কারণ ন্যূনতম অপরিহার্য কন্টেইনারসহ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের (ইকুইপমেন্ট) ঘাটতি। জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস, ওঠানামা, স্থানান্তর, মজুদের উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জামের এই ঘাটতি ব্যাপক হওয়ায় বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটতিতে রয়েছে- কী গ্যানট্রি ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যানট্রি ক্রেন, সার্বক্ষণিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কাজে অপরিহার্য (ফোর হাইটের ৪০ টনি) স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার প্রভৃতি।  

সোনালীনিউজ/এমএন

Link copied!