প্রাথমিকে শিক্ষক অনুপস্থিতি কাম্য নয়

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০১৬, ১১:১৫ এএম
প্রাথমিকে শিক্ষক অনুপস্থিতি কাম্য নয়

প্রাথমিক শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি ওই চিরন্তন প্রবাদের মতোই সত্য ‘হাজিরাতেই কম্ম সাড়া’। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেক শিক্ষক নিয়মিত হাজিরা না দিয়েও দিনের পর দিন পাঠদানে বিরত থাকেন। শহর-নগরে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও গ্রাম পর্যায়ে এ চিত্র ভয়াবহ। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা হালআমলে আরো বেড়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেকে পাঠদানের চেয়ে অন্য কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকছেন। এতে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি দেশের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দি ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন ফিন্যান্সিং গ্লোবাল এডুকেশন অপরচুনিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের গড়ে ১৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। আর এতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাতের পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে রাষ্ট্রের। এটি মোটেই কাম্য নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়াতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে; পাশাপাশি ব্যয়িত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।  

বর্তমানে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের বড় অংশই ব্যয় হয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাবদ। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে নিয়মিত না এসে  বেতন উত্তোলন যেমন অনৈতিক, তেমনি অপচয়ও। কেননা বেতনের বিনিময়ে অনুপস্থিত শিক্ষকরা প্রত্যাশিত সেবা দিচ্ছেন না। এক অর্থে এটি তছরুপেরই নামান্তর। কিন্তু একথাও স্বীকার করতে হবে, প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে সরকারি অনেক প্রকল্পের কাজ করানো হয়। এতে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারেন না। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আবার অনেকে রয়েছেন, যারা অভ্যাসগতভাবে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত। এটি একজন শিক্ষকের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি কিংবা অভিভাবকদের ক্ষমতা না দিয়ে সব ধরনের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাখা হয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার হাতে। এতে তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল অবস্থায় রয়ে গেছে।

এ ছাড়া শিক্ষা পরিদর্শকরা নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন না। মাসে হয়তো দুদিন পরিদর্শনে যান। ফলে অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিষয়টি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরের বাইরে থেকে যায়। এক্ষেত্রে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির হার হ্রাস পাবে।

সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন পাঁচ লাখের বেশি। আর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, সরকার শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়াতে নজরদারি  জোরদারসহ অনিয়মিতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা

Link copied!