ইডেন কলেজ বন্ধ ঘোষণা, ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ১২:১৩ পিএম
ইডেন কলেজ বন্ধ ঘোষণা, ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

ঢাকা : ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে ইডেন কলেজ ও সব হল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের এ তথ্য জানায়।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসসহ হলগুলো বন্ধ থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গমাতা হলের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুন্নাহার গণমাধ্যমকে জানান, পূজার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর সম্পর্ক নেই। বন্ধের সময় কলেজ ক্যাম্পাস ও হোস্টেল বন্ধ থাকবে।

এদিকে ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা যেন স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই থেমে থেমে চলে এসব ঘটনা। এর নেপথ্যে কাজ করেছে সিট-বাণিজ্যসহ নানা ধরনের চাঁদাবাজি। এ লক্ষ্যে আধিপত্য বিস্তারে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে তারা। বিভিন্ন সময়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে দুবার ছাত্রলীগের কলেজ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মীকে। কিন্তু আসেনি কোনো কার্যকর ফল। আর রহস্যজনক কারণে সব সময়ই ‘নীরব দর্শকের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কখনোই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার নজির নেই। ফলে পুনরাবৃত্তি ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা।

এদিকে গত কয়েকদিনের ঘটনায় বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ও তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী উভয় পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মেয়েদের অনৈতিক প্রস্তাব প্রদানসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে আন্দোলন করেছে একটি গ্রুপ।

কিন্তু রোববার রাতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদেরই শুধু স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৪ জুন শনিবার রাতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি জেসমিন আক্তার নিপা এবং সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান অর্পির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওইদিন রাতে আর্জেন্টিনা ও ইরানের মধ্যে খেলা চলাকালে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের একদল মেয়ে এসে খেলা বাদ দিয়ে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে চায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা।

এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ ঘটনায় দুজন আহত হন। শনিবারের ঘটনার দুই দিন পর সভাপতি ক্যাম্পাসে এলে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আগের ঘটনার জের ধরে আয়েশা সিদ্দিকা হলের সামনে আবার শুরু হয় সংঘর্ষ। দফায় দফায় চলা এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় আটজন আহত হন। এই সংঘর্ষের ঘটনায় তৎকালীন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি।

এরপর ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবা নাসরিন রুপা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হলে ২১৯নং কক্ষে নাবিলা নামের একজন বহিরাগত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে রাখতেন। তাকে রাখাকে কেন্দ্র করে হলে অন্য নেত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রুপা তার অনুসারীদের নিয়ে অন্য নেত্রীদের ওপর হামলা করেন। এতে তখন তিনজন আহত হন। এ সময় সাবিকুন্নাহার তামান্নার হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাতে কোপ দেন রুপা।

এর ঠিক দুই দিন পর ১১ নভেম্বর সোমবার সকালের দিকে হলের সিট-বাণিজ্য ও সিট নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক মিলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা ছাত্রীনিবাসের ছাত্রলীগের সদস্য সুস্মিতা বাড়ৈর ওপর হামলা করেন।

এরপর গত আগস্ট মাসে ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা একটি ছাত্রীনিবাসের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থীকে তাদের রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।

পরে এই ঘটনা বাইরে জানাজানি হলে, ওই শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকি দেন কার্যক্রম স্থগিত করা কমিটির সভাপতি তামান্ন জেসমিন রিভা।

সর্বশেষ রিভা ও স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার চাঁদাবাজি ও সিট-বাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় শনিবার রাতে মারধরের শিকার হন সহসভাপতি জান্নাতুল।

এ ঘটনার প্রতিবাদে জান্নাতুলের সমর্থকরা রোববার ক্যাম্পাসে অবস্থান দিয়ে মিছিল করে। পরে এদিন বিকালে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ও জান্নাতুলের সমর্থকরা। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হন। আর এ ঘটনায় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত ও ১৭ জন নেত্রীকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

রিভার সিট-বাণিজ্য : ছাত্রী নির্যাতনের অডিও ভাইরাল হওয়ার পর সম্প্রতি তামান্না জেসমিন রিভা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইডেন কলেজের আবাসিক হলের বিভিন্ন কক্ষ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা।

শুধু তাই নয়, কোনো কারণে যদি কেউ পরীক্ষা বা প্রাইভেটের কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য নিতে সোমবার তামান্না জেসমিন রিভার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের আবাসিক হলের রুমগুলো অ্যালোটমেন্ট হোস্টেল কর্তৃপক্ষ দেখে। আমরা বিভাগ থেকে যে চাহিদা পাই সেটা হোস্টেলে পাঠালে তারা ওইখানে মেয়েদের অ্যালোটমেন্ট দেন। মেয়েরা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে তারপর রুমগুলোতে ওঠে। এখানে দখলে থাকার তো কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে কলেজ সূত্রে আরও জানা যায়, তামান্না জেসমিন রিভা ও তার অনুসারীরা হল ক্যান্টিন, ওয়াইফাই কোম্পানি ও কলেজের ফুটপাতের দোকানে থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন।

রিভার নেতৃত্বে শুধু আগস্ট মাসেই ওয়াইফাই প্রোভাইডার, কলেজ ও হল ক্যান্টিন এবং ফুটপাতের দোকান থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। তবে চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে তীব্র অন্তর্কোন্দল সৃষ্টি হওয়ায় ছাত্রলীগের একাংশ গণমাধ্যমে অডিও, ভিডিওসহ চাঁদাবাজির বিভিন্ন প্রমাণ সরবরাহ করেন।

এ বিষয়ে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জান্নতুল ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন হলে ওয়াইফাই-এর লাইন দেওয়ার জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে তিন লাখ টাকা দিয়েছে ওয়াইফাই-এর ব্যবসায়ী। এই টাকা সহসভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের কেউ পায়ওনি আর নেয়ওনি।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদেরই শুধু বহিষ্কার করা হলো।

গত দুই দিনের ঘটনার পর রোববার মধ্যরাতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৭ জনকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।

স্থায়ী বহিষ্কার হওয়াদের মধ্যে ১০ জন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আর চারজন কর্মী।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে ১৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর এটির প্রাথমিক প্রমাণও পাওয়া গেছে।

স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া ছাত্রীরা হলেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা ঊর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এসএম মিলি ও সাদিয়া জাহান সাথী।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি, সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শর্মিলী, জান্নাতুল লিমা ও সূচনা আক্তার।

এতে দেখা যায়, বিগত দুই দিন যারা বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, তাদেরই কেবল বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত সুস্মিতা বাড়ৈ বলেন, গতকাল (রোববার) রাতের আঁধারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, এটির প্রতিবাদেই আজ (সোমবার) আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন। আমাদের সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম, ‘বিনা তদন্তে বহিষ্কার, নেপথ্যে কারা?

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বহিষ্কারে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আজ আমাদের কোন অন্যায়ের কারণে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে? আমাদের অপরাধ-আমরা আমাদের নির্যাতিত সহযোদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছি। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এত বিস্তর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের কেন বহিষ্কার করা হলো না?

ছাত্রলীগের করা দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি থেকে একজন সদস্য পদত্যাগ করার পরও কীসের ভিত্তিতে এ বহিষ্কার করা হলো, সে প্রশ্ন করেন সুস্মিতা।

কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, তদন্ত কমিটিতে থাকা বেনজির হোসেন নিশি তারই সহযোদ্ধা রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক এজিএস ফাল্গুনী দাস তন্বীকে মারধরের ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি। সেই মামলা এখনো চলমান। অথচ তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। আর তাকেই পাঠানো হয়েছে আমাদের ঘটনার তদন্ত করতে!

তিনি আরও বলেন, আপনাদের ভাষ্যমতে, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়েছে, কিন্তু কোন কারণে শুধু একটি গ্রুপকে গণহারে বহিষ্কার করা হয়েছে, সে ব্যাপারে সুষ্ঠু জবাব দিতে হবে।

বহিষ্কারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি অভিযোগ করে বৈশাখী বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিটে কোনো সমস্যা হলে সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অথচ আমাদের ক্ষেত্রে সেটি করা হয়নি। ‘তাহলে কি তারা এই অন্যায়ের ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করছে? কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছ থেকে আমরা এর জবাব চাই।’

বৈশাখী বলেন, আমাদের সংবাদ সম্মেলনে আমরা ২৫ জন ছিলাম। তাহলে কেন আমাদের শুধু ১২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে? বাকিদের কেন করা হয়নি? এ থেকে বোঝা যায়, আমরা প্রতিহিংসার শিকার।

কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত আরেক সহসভাপতি সোনালি আক্তার বলেন, ‘গতকাল (রোববার) যে ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে পদধারী ১২ জন বাদে যে চারজন কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এই নামে ইডেন কলেজে কোনো কর্মীই নেই। এটা কীভাবে এলো আমাদের বুঝে আসে না।’

এদিকে বহিষ্কার আদেশের প্রতিবাদে সোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আমরণ অনশনে বসার এক ঘণ্টা পর চলে গেছেন ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা।

কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন শেষে দুপুর ১২টার পর অনশনে বসেন বহিষ্কৃতরা, তবে ১ ঘণ্টা পরই তারা স্থান ত্যাগ করেন। ইডেন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, ‘আমরা অনশন করতে এসেছিলাম। এখন চলে যাচ্ছি। অনশন করব না।’

বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতারা অনশন শুরু করলে আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী সংসদের সদস্য আবদুল আউয়াল শামীম তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে তাদের চলে যেতে বলেন। পরে তারা সেখান থেকে চলে যান। আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান ওই ১২ জন। তাদের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেননি।

বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, ইডেনের ১২ জন যখন ভেতরে গিয়ে কার্যালয়ের একটি কক্ষে অবস্থান নেন, তখন সেখানে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আওয়াল শামীম এবং উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। শামীম নেতাদের ভয় দেখিয়ে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপর তারা বেড়িয়ে যান।

অনৈতিক কাজের প্রস্তাব : তামান্না জেসমিন রিভার অনুসরীরা কলেজের সুন্দরী মেয়েদর বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে খারাপ উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাব দেয় বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (স্থায়ী বহিষ্কৃত) সামিয়া আক্তার বৈশাখী। রোববার মধ্যরাতে গণমাধ্যমে কথা বলার সময় তিনি এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, জান্নাতুলের ওপর সহিংস আচরণ নতুন নয়। আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। বৈধ রুমের মেয়েরা উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করার সময় সভাপতির (তামান্না জেসমিন রিভা) অনুসারীরা তাদের ছবি তুলে রাখেন। পরে সেখান থেকে সুন্দরীদের বাছাই করেন। পরে বাছাইকৃত মেয়েদেরকে রুমে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে খারাপ উদ্দেশ্যে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, তারা ওই মেয়েদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করাতে চান।

কিছুদিন আগে একজন মেয়ে কান্না করতে করতে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন উল্লেখ করে বৈশাখী বলেন, কলেজের কর্মকর্তারা সবাই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তারা জব্দ।

তিনি আরও বলেন, দলের সুনাম যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেজন্য এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিনদিন এমন বৈরী আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে যাবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাহায্য না করে আমরা যদি সিট-বাণিজ্য, মেয়ে-বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করি, তাহলে তো ইডেন কলেজেরও বদনাম হবে।

ইডেন কলেজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্য ও মেয়েদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোহান খান বলেন, ইডেন কলেজের কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সেখানে নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল। সর্বশেষ বোধহয় একটি রুম দখলকে কেন্দ্র করে তাদের মনে চাপা থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে।

এ বিষয়টি এতদূর আসত না যদি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করত। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন বলে আমি মনে করি।

সিট-বাণিজ্য ও মেয়েদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ইডেন কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অভিযোগ যদি তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হয়, তখন এর বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়া যাবে। এর আগের এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

১৭ জনকে বহিষ্কারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ইডেনে যখন কমিটি প্রদান করা হয়, তখন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মতামত নেওয়া হয়নি। আবার রোববার যখন ১৭ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো, তখনও নির্বাহী সংসদের মতামত নেওয়া হয়নি। সুতরাং পুরো প্রক্রিয়াটিই অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, আগের ঘটনা এবং গতকাল (রোববার) যে ঘটনা ঘটেছে, ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারা তদন্ত কমিটি মানতে চায় না।

তাই আমরা নিজেরা ভিডিও ফুটেজ দেখে যাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি, তাদের আপাতত বহিষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া পুরো ঘটনার মধ্যে যারা জড়িত আছে, ইতোমধ্যে কলেজ প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা তাদের মতো করে জানাবে। তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

লেখক আরও বলেন, তারা সংবাদমাধ্যমে যে ধরনের অভিযোগ করেছে, তার একটি প্রমাণও দেখাতে পারেনি।

রোববার রাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কলেজের শিক্ষকদের সামনে ঘটনা ঘটেছে। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখেছি।

যেগুলো আমরা সরাসরি পাই, যেটাতে শিওর হতে পারি, সেটাতে আর তদন্ত করার দরকার নেই। বহিষ্কারের ক্ষেত্রে সেন্ট্রালের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি সরাসরি যুক্ত হয়েছে, আমরা বহিষ্কার করেছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!