কল্যানপুর গার্লস কলেজে সুচিন্তা’র জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার

‘তারুণ্য যেনো জঙ্গিবাদের অন্ধকারে হারিয়ে না যায়’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১৬, ২০১৯, ০৩:৪২ পিএম
‘তারুণ্য যেনো জঙ্গিবাদের অন্ধকারে হারিয়ে না যায়’

ঢাকা : ‘জাগো তারুণ্য রুখো জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নিয়মিত জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রমের এবারের  সেমিনারটি আয়োজন করা হয়েছিল কল্যানপুর গার্লস কলেজে।

এবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনয় শিল্পী রিয়াজ আহমেদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন এবং এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে আজ সারাবেলা সম্পাদক জব্বার হোসেন বলেন, ধর্ম প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অধিকার। সেই বিশ্বাস ও অনুভূতির জায়গাটি তে তারা আঘাত করছে ক্ষমতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের লোভে। যার সঙ্গে ধর্মেও আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদের ফলে ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে। তারা যে ইসলামের কত বড় শত্রুতা আমাদের বোঝা দরকার। ইসলামে বলা হয়েছে, সেই প্রকৃত মুসলমান যার কাছে অন্য ধর্মের মানুষের জান, মাল নিরাপদ থাকে।

পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে চিত্রনায়ক রিয়াজ আহমেদ বলেন, জীবনের শিশু, কিশোর, তরুণ ও বৃদ্ধ এই ধাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে তারুণ্য। তারুণ্যের আলোয় আলোকিত হয় সমাজ ও রাষ্ট্র। কিন্তু কিছু বিপদ গামী, স্বার্থান্বেষী মানুষের প্ররোচনায় এই তারুণ্য হারিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিবাদের অন্ধকারে। তাই সঠিক পথে থাকতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ২০০২ সালে ময়মনসিংহে এক সাথে ৪টি হলে বোমা হামলা হয়েছিল, ২টি হলে আমার সিনেমা চলছিল। ২৭ জন মারা যায় ঐ ঘটনায়। আহতদের দেখতে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমি কোনদিন ভুলবনা, সবুর নামে একজন ব্যক্তি বোমা বিষ্ফোরণে যিনি দুই পা হারিয়েছেন তার পাশে দাড়ানোর পর সে বলল, ‘দুই পা হারায় ছিতো কি হইয়ে আপনি আমাকে একটা অটোগ্রাফ দেন’ এ কথা শোনার পর আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। সেখানে দাড়িয়ে অঝরে কেঁদেছিলাম। আমরা বাঙালিরা অনেক সহজ-সরল। আমাদের এই সরলতার সুযোগ নিয়ে ধর্মের মিথ্যা ভয় ও বেহেশত এর  প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে নিতে যাচ্ছে একটি মহল।

এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেডহামলা, ১৭ আগষ্ট ২০০৫ এ ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমাহামলা, ১৮ জুলাই ২০১৬ তে হলি আর্টিজান হামলা। এই হামলাগুলো কারা করছে? তরুণদেরই ব্যবহার করা হচ্ছে এই সব হামলায়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বাণী বিকৃত করে পবিত্র কোরআনের ভুল তর্জমা করে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিয়ে এই সব নৃশংস হামলা করা হচ্ছে।

পবিত্র কোরআনের সূরা আলমায়িদায় বলা হয়েছে, ‘একজন নিরীহ মানুষকে হত্যাকরা আর সমস্ত মানবজাতি হত্যা করা এক’। তাই ভুল পথ থেকে সরে আসতে হবে তরুণদের। পাশাপাশি সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আলেম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে কোরআন হাসিদের সঠিক ব্যাখ্যা ও তর্জমা নিয়ে। তাহলেই এই সমস্যার সমাধান হবে। ইতিমধ্যেই সরকার  প্রধানের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কারনে বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত হয়েছে। তবে শকুনের দল বসে নেই তাই আমাদের ও সচেতন থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে কল্যানপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল শাহনাজ বেগম বলেন, বাংলাদেশ ইসলামিক দেশ। আমরা কি চাইবো জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিত হোক? অবশ্যইনা। আমরা চাই অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ। ধর্ম নিরোপক্ষ শান্তিপূর্ণ একটি দেশ চাই আমরা।

কল্যানপুর ৫ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় আইন শৃঙ্খলাব-বাহিনীর অপারেশনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ইসলাম মানুষ হত্যা সমর্থন করেনা। তবুও কেন তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরছে? কারণ তাদেও ভুল বোঝানো হচ্ছে। ব্রেনওয়াশ করা হচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখাযায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া, বিভিন্ন অপারেশনে নিহত হওয়া সব জঙ্গিরাই তরুণ। তাই বুঝতে হবে তরুণদের কেই টার্গেট করে জঙ্গি বানানো হয়। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সমৃদ্ধির পথে।

সুচিন্তা’র  গবেষণা সেলের পক্ষ থেকে আশরাফুল আলম শিক্ষার্থীদের  প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ সমর্থন-অসমর্থন বিষয়ে মত বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আজ সারাবেলা’র সম্পাদক জববার হোসেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!