ফাইল ছবি
বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র আর নেই। ৮৯ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান তারকা সোমবার সকালে মারা গেছেন। চলতি মাসের শুরুতে অসুস্থ হয়ে কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি বাড়ি ফিরে যান। তাঁর মৃত্যুর খবরে বলিউডজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক।
ছয় দশকেরও বেশি সময়জুড়ে রঙিন অভিনয়জীবনে তিনি অ্যাকশন হিরো, রোমান্টিক চরিত্র থেকে শুরু করে প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার ভূমিকাও সমান দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তবু বিস্ময়করভাবে তাঁর নামের সঙ্গে কখনোই ‘সুপারস্টার’ তকমা জড়ায়নি।
ধর্মেন্দ্র কেওয়াল কৃষণ দেওল মাত্র ২৪ বছর বয়সে ১৯৬০ সালে দিল ভি তেরা হম ভি তেরে ছবির মাধ্যমে সিনেমায় অভিষেক করেন। পরের কয়েক বছরে বন্ধিনী, আই মিলন কি বেলা, কাজল-এমন সফল ছবিগুলোতে সহ-চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর প্রথম বড় সাফল্য আসে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধভিত্তিক ছবি হকীকতের মাধ্যমে। এরপর ফুল অউর পাথর তাঁকে বাণিজ্যিক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়।
১৯৬০-এর দশকের শেষ ভাগ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত টানা শীর্ষ তারকাদের একজন ছিলেন তিনি। অনুপমা, আদমি অউর ইনসান, মেরা গাঁও মেরা দেশ, সীতা অউর গীতা, শোলে, ইয়াদোঁ কি বারাত, ধর্ম বীরসহ বহু জনপ্রিয় ছবি উপহার দেন দর্শককে।
৮০–এর দশকে তিনি বেশি মনোযোগ দেন অ্যাকশন ঘরানায়। কম বাজেটের বদলে কি আগ, গুলামি, লোহা ও এলান-ই-জাঙ্গ-এমন বহু ছবিতে অভিনয় করেন। ৬৪ বছরের ক্যারিয়ারে ৭৫টি হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি-যা হিন্দি সিনেমায় কোনো অভিনেতার সর্বোচ্চ লিড-রোল সাফল্য। অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, শাহরুখ খান বা সালমান খানের চেয়েও বেশি।
তবু নানা কারণে তাঁকে কখনোই বলিউডের ‘নম্বর ওয়ান’ অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। ক্যারিয়ারের শুরুতে শীর্ষে ছিলেন দিলিপ কুমার। এরপর রাজেশ খান্না আর ১৯৭০–এর দশকে অমিতাভ বচ্চন নেতৃত্ব দেন শিল্পে। ধর্মেন্দ্রর বহু বড় ছবি ছিল বহু-নায়কভিত্তিক, যখন অন্য তারকারা নিয়মিত একক নায়ক-নির্ভর ছবি দিয়ে শীর্ষে অবস্থান নিশ্চিত করছিলেন।
১৯৮০-এর দশকে তাঁর কিছু একক হিট এলেও সেগুলোর বাজেট ছিল তুলনামূলকভাবে কম। তাঁর ক্যারিয়ারে যেমন ছয়টি ব্লকবাস্টার ও সাতটি সুপারহিট ছিল, তেমনি ছিল প্রায় দেড়শ ব্যর্থ ছবি-যা বলিউডে সর্বোচ্চ ব্যর্থতার তালিকায় দ্বিতীয়।
তবুও তিনি কখনোই বি-গ্রেড অ্যাকশন ছবিতে কাজ করতে সংকোচ বোধ করেননি। ৮০-এর দশকের শেষ দিকে হিন্দুস্তান টাইমস–এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মেন্দ্র বলেছিলেন, বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো হেলিকপ্টার থেকে লাফ দেন। তাঁর ভাষায়, বেশি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে না, ছবিকে ভালোবাসেন বলেই সুযোগ পেলেই অভিনয় করেন।
তিনি বলেন, জানেন কিছু ছবি চলবে না, তবুও মন দিয়ে অভিনয় করেন। বছরে বহু ছবি করেন, তিনটি চলে খুব ভালো, বাকিগুলো বাদ দেন না। কারণ সেগুলোর পেছনেও আছে সবার পরিশ্রম। দর্শক তাঁকে আজীবন ভালোবেসেছে, তাই তাঁদের খুশি দেখাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় আনন্দ।
ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গন হারাল তাদের এক অবিস্মরণীয় নায়ককে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :