তবুও দেশের নাটকের পক্ষে তারা...

  • মিতুল আহমেদ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০১৬, ০৭:৪২ পিএম
তবুও দেশের নাটকের পক্ষে তারা...

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

ঢাকা: বাংলা নাটকের সোনালী অতীত বলতে যা বোঝায় তা মূলত নব্বই দশকের ইতিহাস। নব্বই দশকটা বাংলাদেশের মানুষের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। শুধু রাজনীতিতে নয়, শিল্প, সাহিত্য আর সংস্কৃতিতেও বিশেষ ভূমিকা আছে এই দশকটির। আর টিভি নাটকেও যে এই দশকটি স্মরণে রাখার মতো ঘটনা, তা যেনো মনে করিয়ে দিল বাংলাদেশের নির্মাতা, শিল্পী আর কলাকুশলীদের ‘বিদেশি সিরিয়াল ঠেকানোর আন্দোলন’-এর দিনটি! কারণ এদিন একই মঞ্চে উঠে সবাইকে নস্টালজিক করে দিয়েছিলেন নব্বই দশকের ছয় জনপ্রিয় শিল্পী!

হ্যাঁ। বুধবার ব্যাপী বিদেশি সিরিয়াল ঠেকানোর আন্দোলন ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এই দিনটি ঘিরে এখানে ঐক্যমত পোষণ করতে এসেছিলেন টেলিভিশনের সাথে জড়িত সমস্ত নির্মাতা, প্রযোজক, শিল্পী আর কলাকুশলীরা। আর এদিন একই মঞ্চে একসঙ্গে উঠে সবাইকে স্মৃতিকাতর করে দেন বিপাশা হায়াত, তৌকির আহমেদ, শহিদুজ্জামান সেলিম, কাজী রোজি সিদ্দিকী, আজিজুল হাকিম ও জাহিদ হাসানের মতো তারকা অভিনেতা অভিনেত্রীরা। মঞ্চে উঠে দেশের নাটকের পক্ষে তারা কথা বলেন বিস্তর। স্মরণ করিয়ে দেন বাংলাদেশের নাটকের সোনালী সময়ের কথা।           

বক্তব্যে বাংলাদেশে যে ভারতীয় বা অন্যান্য দেশের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিল না সে কথাও বক্তব্যে বলেন তারা। শুরুতে কথা বলেন শহিদুজ্জামান সেলিম। তিনি মঞ্চে নব্বই দশকের জনপ্রিয় টিভি তারকাদের ডেকে তোলার পেছনের কারণ জানিয়ে বলেন, যখন টেলিভিশন নাটক শুরু হয় সেই যাত্রার শুরুতেই যারা ছিলেন তাদের মধ্যে জাহিদ, তৌকির, আজিজুল হাকিম, বিপাশা হায়াত, আফসানা মিমি, শমি কায়সারের নাম উল্লেখ করার মতো। এখানে মিমি বা শমি হয়তো উপস্থিত থাকতে পারেনি। যদি থাকতো তাহলে তাদেরকেও একসাথে মঞ্চে আসার জন্য বলতাম। এটি একটি ইমোশন। ইমোশনের জায়গা থেকে আমরা সবাই একসাথে মঞ্চে উঠেছি।

তিনি তার বক্তব্যে পরবর্তী প্রজন্মের তারকাদেরকেও মঞ্চে এসে দেশীয় টিভি নাটকের পক্ষে কথার বলার আহ্বান জানান। এরপর বিপাশা হায়াতকে মাইকে কথা বলার আহ্বান জানান।  

মঞ্চে উঠেই বিপাশা হায়াত বলেন, এখন টেলিভিশন খুললে নাটক নামে যে জিনিষগুলো প্রচার করা হয় তা দেখে আমার কষ্টে বুক ভেঙে যায়। আসলে আমি সহ্য  করতে পারি না এগুলো। কারণ একটি দেশের মানুষের মগজ, মনন ও রুচি তৈরি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়াম টেলিভিশন। টিভি নাটক বানাতে কোন নির্মাতা প্রয়োজন, কোন আর্টিস্ট প্রয়োজন তা নির্ধারণ করার মতো যোগ্যতা আজকের টিভি চ্যানেলগুলোর আছে বলে আমি মনে করি না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো ভালো নাটক হচ্ছে, কিছু চ্যানেল হয়তো শিল্পীদের মূল্যায়ন করছে কিন্তু তা এতোই নগন্য যা বলার মতো নয়। তাই বিদেশি সিরিয়াল ঠেকানোর পাশাপাশি নিজেদের মানটাও দেখতে হবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের নাটক জনপ্রিয় নয় বা মানুষ দেখে না বলে যারা প্রচার করেন তাদের সমালোচনা করে রোজি সিদ্দিকী বলেন, আমি যেসময় নাটকে অভিনয় করতাম সেসময় নাটকের দৃশ্যে রিক্সা গাড়ি কোনো ধরনের যানবাহন চলতো না। অথচ সেইসব নাটক করেও আমি রাস্তায় বেরোতে পারিনি। মানুষ আমাকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে জনপ্রিয়তার কারণে। তাহলে আজকে কেনো এই প্রশ্ন উঠছে যে বাংলাদেশের নাটক জনপ্রিয় হয় না? আমি বিশ্বাস করি আমাদের সময় যেসব নাটক হতো তা এই সময়ে চ্যানেলের যে অরাজকতা হচ্ছে তারচেয়ে স্মরণীয়। আমাদের নাটকের ডায়ালগ পর্যন্ত মানুষ মনে রাখতো। কিন্তু এখনকার টিভি চ্যানেলে যে নাটকগুলো হয়, বেশির ভাগই বোধয় সেই নির্মাতাই নাটকের নামটিই মনে রাখতে পারেন না। সবার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, টিভি চ্যানেল মালিক থেকে শুরু করে যারা আন্দোলন করছেন সবার প্রতি বলছি। আপনারা যেকোনো কিছু করার আগে শিল্পীদের পাশে রাখুন।

আজিজুল হাকিম তার বক্তব্যে উপস্থিত শিল্পী ও কলাকুশলীদেরকে টিভি চ্যানেলের কোনো ধরনের প্রলোভনে না পরার আহ্বান জানান। এবং সবাইকে অভিনয় সংঘের সদস্য পদ গ্রহণ করে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার কথা বলেন।

অন্যদিকে টেলিভিশন মালিকদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকির আহমেদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এক সময় আমাদের নাটক শুধু বাংলাদেশ নয়, সাড়া ভারতবর্ষে দেখতো। কলকাতার রাস্তায় হাঁটতে গেলে একসময় আমাদের জড়িয়ে  ধরতো মানুষ। আমেরিকা ইউরোপসহ বিদেশের যেখানেই বাংলা ভাষাভাষি মানুষ বাস করতো সেখানেই আমাদের নাটক বেশ  জনপ্রিয় ছিল। বিটিভিতে তারা দেখতো সেগুলো। আর এরপর ধীরে ধীরে প্রাইভেট চ্যানেল আসতে লাগলো। চারটি চ্যানেল আসলো। তারপর দশটি চ্যানেল। এখনতো তিন ডজন টেলিভিশনের বোঝা কাধে নিয়ে আমরা মেরুদণ্ড বাঁকা করে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছি। এইটুকু দেশে তিন ডজন টেলিভিশনের দরকার ছিল? তারা কি যোগ্য টেলিভিশন চালানোর জন্য? তাদের কি কোনো কমিটমেন্ট আছে আদৌ? ব্যবসা থেকে এসে ক্ষমতার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কিছু কি করছে?

শেষ মানুষ হিসেবে কথা বলেন জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান। তিনি বক্তব্যে চ্যানেল মালিকদের স্বজন প্রীতির কথা তোলে ধরে প্রশ্ন তুলেন অনুষ্ঠানের মান নিয়ে। জাহিদ হাসান বলেন, আসলে আমাদের সবার কথা এক। সবার দাবী এক। আর সেজন্য এখানে একত্র হওয়া। এখানে মঞ্চে আমরা যারা দাঁড়িয়ে আছি সবাই স্টেজ থেকে আসা। আমরা শিখে আসছি। আমরা যখন বিটিভিতে কাজ করতাম। তারপরে যখন কয়েকটা চ্যানেল হলো সেই চ্যানেলে ক্যামেরা ম্যান থেকে শুরু করে ক্রু, এডিটর এবং প্রোগ্রাম হেড সবাই এসেছিল বিটিভি থেকে। আমাদের স্কুলিং হয়েছে বিটিভি থেকে। ততোদিন পর্যন্ত চ্যানেলগুলোতে প্রোগ্রাম নিয়ে একটা মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। কিন্তু এখন যারা প্রোগ্রাম দেখেন তাদের কেউ হয় কোনো মালিকের শালি, হয় কোনো মালিকের বউ। তাদের সাথে যাদের সম্পর্ক ভালো তারাই প্রোগ্রামগুলো পাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Link copied!