যা চেয়েছি, সবই করেছি

  • বিনোদন প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০১:৫১ পিএম
যা চেয়েছি, সবই করেছি

ঢাকা : সানি লিওননিজের নিয়তি নিজ হাতে লিখেছিলেন বলিউডের আলোচিত তারকা সানি লিওন। সেটি পছন্দ হয়নি বলে আবারও লিখতে হয়েছে তাঁকে। ২০১৩ সালে পর্নোশিল্প থেকে অবসরের ঘোষণা দেন কানাডীয়-আমেরিকান এই অভিনয়শিল্পী। এরপর অভিনয় শুরু করেন বলিউডে।

‘জিসম টু’, ‘রাগিনি এমএমএস টু’ দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর বলিউড-যাত্রা। এরপর আর থামতে হয়নি। নৈতিকতায় দাঁত চেপে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করেও অতীতকে ভুলতে পারছেন না তিনি। সালমান খানের ‘বিগ বস’-এ আসার পর আমির খান টুইট করে তাঁর সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন। ‘রাইস’ ছবিতে শাহরুখ খান তাঁকে নিয়েছেন ‘লাইলা ম্যা লাইলা’ গানে। তাঁর উত্তাল জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘করণজিৎ কৌর: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব সানি লিওন’। সম্প্রতি প্রস্তুত হয়েছে এর দ্বিতীয় সিজন।

বাংলাদেশের গানবাংলা চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপসের সঙ্গে একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন সানি লিওন। ‘লাভলি অ্যাকসিডেন্ট’ শিরোনামে গানটি গেয়েছেন তাপস ও হারজত কৌর। গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন কৌশিক-আকাশ-গুড্ডু। গত সোমবার মুম্বাইয়ে রাত আটটায় জি মিউজিক কোম্পানির ইউটিউব চ্যানেলে মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউটিউবে তা দেখা হয়েছে ২৭ লাখ ৪৫ হাজারবার।

ভারতের সানসিটি মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট কৌশিক হোসেন তাপসকে নিয়ে একটি মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছে। এর শিরোনাম ‘লাভলি অ্যাকসিডেন্ট’। এই গানে সানি লিওন শুধু একজন মডেলই নন, তিনি ভিডিওটির প্রযোজকও। সানি আর তাঁর স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবারের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পুরো প্রকল্পের প্রযোজনা করেছে। ড্যানিয়েল ওয়েবারের এটি প্রথম হিন্দি মিউজিক ভিডিও।

সানি লিওনের আছে এক অন্য জীবন। ড্যানিয়েল ওয়েবারের সঙ্গে সংসারে তাঁদের রয়েছে তিন সন্তান—নিশা, যাকে দত্তক নেওয়া হয়েছে এবং যমজ শিশু নোয়া ও অ্যাশার। তাঁদের নিয়ে আনন্দেই কাটাচ্ছেন সানি। কিছুদিন আগে নিজের জীবন ও কাজ নিয়ে ফিল্ম ফেয়ারকে একটি সাক্ষাৎকার দেন এই অভিনেত্রী।

চলুন জেনে নেওয়া যাক সানির নিজের কিছু কথা-

‘করণজিৎ কৌর : দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব সানি লিওন’-এর দ্বিতীয় সিজন প্রসঙ্গে কিছু বলুন

হৃদয়বিদারক! এটা আমার গর্তে গিয়ে লুকানোর মতো ঘটনা। আমি আর ড্যানিয়েল গাড়িতে করে রাতে খেতে বের হয়েছিলাম। সে সময় আমাদের টিম তাঁকে দ্বিতীয় সিজনের ট্রেলারটা পাঠায়। দেখে আমি রীতিমতো কাঁদতে শুরু করেছিলাম। এটা আমাকে অনেক পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, যা আমি কখনো মনে করতে চাইনি। তবে আমার ধারণা, দর্শক এটা পছন্দ করবে।

অতীতের দিকে ফিরে তাকাতে কষ্ট বা অস্বস্তি হয়?
 
অনেকেই বলেছিলেন, নিজের চরিত্রে অভিনয় করলে ভালো লাগবে। ব্যাপারটি আসলে সে রকম ছিল না। আপনি যখন জীবনের একটা বাঁক বদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, বাবা-মা চলে গেছে, আপনাকেও অন্য কোথাও চলে যেতে হচ্ছে, এ সময় আপনি ভালো থাকবেন? আপনাকে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হবে। যে বলে, ‘ভেবো না, সময় সবকিছু সারিয়ে তুলবে’, তাঁকে বলব, তোমাকে...।’ সময় কিছুই ঠিক করতে পারে না। আমি এখনো এসব নিয়ে খারাপ বোধ করি। মা-বাবা সঙ্গে নেই বলে আমার এখনো খারাপ লাগে। সুতরাং এ সিরিজে কাজ করাটা আমার জন্য থেরাপির মতো ছিল না। বরং কঠিন ছিল। প্রথমত, কাজটি করার সিদ্ধান্ত কেন নিলাম। দ্বিতীয়ত, সবাইকেই এসবের মধ্য দিয়েই যেতে হয় এবং মুখোমুখি হতে হয়।

ভারতে যে কাজগুলো করেছেন, তা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?

আমি ভালো গল্পের ব্যাপারে আগ্রহী। কোনো ঘরানার প্রতি আমার পক্ষপাত নেই। আমার জন্য বড় জিনিসটা হচ্ছে, সঠিক মানুষকে খুঁজে বের করা। আগে যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তারা চন্দ্র-সূর্য-তারাকে সাক্ষী রেখে কাজ করেছিল এবং সেগুলো ভালো হয়নি। আমার কিছু ছবি দেখলে নিজেই ভেতরে-ভেতরে কুঁকড়ে যাই। লজ্জা করে। কারণ যেভাবে করব বলে কথা দিয়েছিলাম, সেভাবেই করেছি। যেভাবে কর্মশালায় শিখেছি, সেভাবেই করেছি। আমি এমনই বোকা যে, রাতারাতি ফল পেতে চেয়েছিলাম। এখন ঠিক করেছি, সময় নেব। সঠিক মানুষটিকে খুঁজে বের করব, যে আমাকে দিয়ে ভালো কাজ করাবে।

আপনি বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ট্রল সামাল দেন। বিরক্তি হয়?

বিরক্ত লাগে কেবল যখন গুরুত্বহীন জানার পরও কোনো বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম হইচই জুড়ে দেয়, কেবল লোকজনকে কিছু ফুটেজ দেখাবে বলে। যেমন একবার বেঙ্গালুরুতে নিউ ইয়ারের এক অনুষ্ঠানে আমার পারফর্ম করার কথা। তখন জানতে পারি, আমি নাকি সেখানে গেলে গণ-আত্মাহুতি দেওয়া হবে। আসলে কেউই সেটা করত না। দুই সপ্তাহ পর এক ভিডিওতে এক লোক বলল, ‘যদি সে আমাদের এখানে আসতে চায় আসুক, আমরা ঠেকাব।’ এ থেকে কী বোঝা যায়? এটা কোনো খবরের বিষয়? এসবই বিরক্ত লাগে। তবু আমি শান্ত থাকি।

এ ধরনের পরিস্থিতে নিজেকে শান্ত রাখেন কীভাবে?

বেশির ভাগ সময় ওসব বাজে জিনিস পড়া বা দেখা থেকে বিরত থাকি। লোকগুলো হতাশাগ্রস্ত, নিজেদের জীবন নিয়ে আপসেট থাকে। এসব করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে শান্তি পায়। আমি এসবে গুরুত্ব দিই না। বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত কেউ সেসব নিয়ে কিছু বললে তখন খারাপ লাগে। সেটা তখনই একটা ঘটনা, যদি বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী কাউকে হুমকি-টুমকি দেওয়া হয়। সে রকম একবার হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা লেখা ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই লোকের অনুসারীরা আমাকে ও আমার পরিবারের লোকেদের হুমকি দিতে শুরু করেছিল। আমাকে বলেছিল, ‘এসো এখানে, তোমাকে দেখে নেব।’ ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম তখন।

বাচ্চা নেওয়ার আগেই বাচ্চা দত্তক নিলেন কেন?

আমি আর ড্যানিয়েল আগে থেকেই একটা এতিমখানায় সাহায্য করতাম। একবার সেখানকার বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বাচ্চাগুলো খুব সুন্দর ছিল। যখন টিনএজার ছিলাম, তখন থেকেই একটা বাচ্চা দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে ছিল আমার। সেখানে গিয়ে নিশার চোখের দিকে তাকানোর এক মিনিটের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিলাম, সে আমার সন্তান হতে যাচ্ছে। কিন্তু যখন দত্তক চাইলাম, দেখলাম বিষয়টি এতটা সহজ নয়। একবারে মন ভেঙে গিয়েছিল।

তারপর?

কপাল ভালো, নিশাকে দত্তক নেওয়ার সবকিছু ঠিকঠাক হলো গত বছরের ২১ জুন। একই দিনে জানতে পারলাম, আমাদের একসঙ্গে দুজন সন্তান আসছে। যেদিন নিশাকে দত্তকের চিঠি পেয়েছি, ওই দিনেই ডাক্তার জানালেন, আমি যমজ শিশুর মা হতে যাচ্ছি।

অ্যাশার ও নোয়ার সঙ্গে নিশার সম্পর্ক কেমন?

কেবলই ওরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ওরা একসঙ্গে খেলছে। দেখতে খুব ভালো লাগে। নিশা বড় বোনের মতো ওদের দেখে রাখে।

মাতৃত্ব আপনার জীবনে কী যুক্ত করেছে?

আমি আরও আগেই বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। আমরা যা চেয়েছিলাম, বোধ করি তার সবই আমাদের ছিল। আমরা কেবল আমাদের জীবনটা একটা শিশুর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছিলাম। এখন আমাদের তিন সন্তান। ঈশ্বর যেমনটি চেয়েছেন। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। আমি ভালো আছি, কারণ আমি কাজ করছি। এটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আর মাতৃত্ব এমনই এক ব্যাপার, যেটা আমাদের জন্য সব থেকে আনন্দের। আমি এখন নিজেকে খুঁজে পাই, কারণ আমার একটা পরিবার আছে।

মা হওয়ার পর ড্যানিয়েলের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে?

আমার মা হওয়ার ঘটনাটি আমাদের দুজনকেই ব্যক্তিগতভাবে গোছালো হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আগে সবকিছু আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। তাঁর সঙ্গে একাকী সময়গুলো খুব মিস করতাম, কারণ সময়ই ছিল না আমার। এখন আমাদের ঘরের দরজা সব সময়ই খোলা থাকে। আমরা বেড়াতে গেলে নিশা আমাদের ঘরে থাকে। ড্যানিয়েলের সঙ্গে ঘুরতে বা খেতে যেতে পারি। আমাদের ধৈর্য যেমন বেড়েছে, একে অন্যকে সময় দিতে পারি।

বাড়িতে থাকলে কীভাবে সময় কাটান?

বাড়ির টুকটাক কাজ করি। আমি একজন পরিপূর্ণ মা হয়ে উঠতে চাই। আমি ছোটখাটো সব কাজ করতে পছন্দ করি। বাচ্চাদের ডায়াপার বদলানো থেকে শুরু করে খাওয়ানো, কাঁদলে কোলে নেওয়া, ঠিকমতো ঘুমোচ্ছে কি না, সেটা দেখা। আমি সৌভাগ্যবতী, কারণ ড্যানিয়েল বাচ্চাদের সঙ্গে যথেষ্ট সময় দেয়। সে খুবই সক্রিয় বাবা, বাচ্চাদের কাছে থাকতে ভালোবাসে।

জীবনে ব্যতিক্রম কিছু করেছেন বলে মনে হয়?

আমি অনুশোচনা নিয়ে বাঁচি না। জীবনে যা করতে চেয়েছি, সবই করেছি। অনেক বড় তারকার সঙ্গে যদিও এখনো কোনো কাজ বা ছবি করিনি। তবে যতটা করেছি, সততার সঙ্গে করেছি। সেসব থেকে যা পেয়েছি, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আমার আত্মাকে মন্দের কাছে বিকিয়ে দিইনি। আমি আমার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট। সুখেই আছি। সামনের জীবনের জন্য সেটাই বড় কথা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!