দুই ঘণ্টার বাজারে ৩৫০ মণ মাছ বিক্রি

  • ব্রাহ্মণাড়িয়া প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২০, ০৫:০৫ পিএম
দুই ঘণ্টার বাজারে ৩৫০ মণ মাছ বিক্রি

ব্রাহ্মণাড়িয়া: ভোর হওয়ার আগেই স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে মাছ কেনার ব্যাপারীরা। বসে নেই ছোট ব্যবসায়ীরাও। মৎস্য চাষীরা নানা প্রজাতির মাছ বিক্রি করতে নিয়ে আসছেন আড়তে। খাতা-কলম হাতে হিসাব কষতে ব্যস্ত আড়তদাররা। পছন্দের মাছ বিক্রি করতে চলে দর কষাকষিও। তবে সর্বোচ্চ দরদাতার হাতে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত আড়ত জুড়ে চলে মাছ বেচাকেনার কর্মযজ্ঞ।

ব্রাহ্মণাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের বড়বাজার মাছ আড়তে প্রতিদিন দুই ঘন্টার বাজারে ৩ থেকে ৩৫০ মণ মাছ বিক্রি হয়।

একাধিক আড়ৎদার জানায়, বড় বাজার এলাকায় দীর্ঘ বছর ধরে মাছের এ আড়ৎ গড়ে উঠেছে। এই বাজারে মোট ১৪ জন আড়ৎদার রয়েছে। রেলও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্রতিদিন শত শত ব্যাপারী, ব্যবসায়ী, মৎস্য চাষী আসছেন মাছ বিকিকিনি করার জন্য। তবে বড় বড় মাছের জন্য এখানকার খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে। নিরাপদ পরিবেশ থাকায় মাছ কিনে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর রাত থেকেই মৎস্য চাষীরা ছোট বড় যানবাহনে করে মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন বড় বাজার আড়তে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈবর, নরসিংদী, ঢাকা, কুমিল্লা, লাকসাম, ফেনী, চট্টগ্রাম, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল,সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন মাছ কেনার জন্য শতশত পাইকার ও স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা। দূরের পাইকাররা রাতের মধ্যেই হাজির হন মাছ কেনার জন্য। তারপর ওইসব ব্যবসায়ীরা ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান সিএনজি অটো রিকশার মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে নিজ নিজ গন্ত্যব্যে। দুই ঘণ্টার বাজারে আড়ত চলাকালে ভেতরে পা ফেলার জায়গা থাকে না। ব্যাপারী, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে। বিক্রি হওয়া মাছের মধ্যে  রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙ্গাস, মৃগেল পুটি, স্বরপুটি, কার্প, তেলাপিয়া, বোয়াল, গ্রাসকাপ, নাইলোটিকা, শিং, মাগুর, কৈ, সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। প্রতিদিন ভোর বেলা আড়তে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার ৩ থেকে সাড়ে ৩শ মণ মাছ বিক্রি হয়।

একাধিক মৎস্য চাষী জানায়, পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, শান্তিনগর, খড়মপুর দুর্গাপুর, উপজেলার ধাতুর পহেলা, তুলাবাড়ি, কুসুমবাড়ি, টানুয়াপাড়া, হীরাপুর, বাউতলা, উমেদপুর, আজমপুর, মোগড়া,মনিয়ন্দ ধরখারসহ বিভিন্ন এলাকায় যুবকরা পুকুর হাল, বিল, জলাশয় ও ফসলি জমিতে বাঁধ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করছেন। প্রতিদিনই তারা আড়তে মাছ বিক্রি করতে আসছেন। চাষকৃত মাছ বিক্রি করতে মাঝ রাতের আগেই ধরে আড়তে নিয়ে আসতে হয় তাদের।

আড়ৎদার মো. বাছির খান জানায়, পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য চাষীরা তাদের উৎপাদিত বেশীভাগ মাছ বিক্রি করতে এখানে নিয়ে আসেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অন্তত দুশতাধিক পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা এখান থেকে  নিয়মিত মাছ কেনেন।

তিনি বলেন, এখানে দৈনিক ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি হয়। তাছাড়া এখানকার মাছ দামে অনেক কম থাকায় অনেকে বিয়ে, জন্মদিন, অন্যান্য অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নের জন্য মাছ কিনতে আসেন। তাছাড়া এখানকার উৎপাদিত মাছ ভারতেও রপ্তানি হচ্ছে। এই বাজারে অন্তত ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় বলে জানায়।

কুমিল্লা থেকে আসা পাইকার মো. হোসেন মিয়া বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ভোরে ৫-৬ মনের উপর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্রয় করে মিনি ট্রাকে করে নিয়ে তিনি নিয়মিত বিক্রি করছেন। এখানকার মাছের কদর রয়েছে বেশ ভালো। মাছ নিয়ে বাজারে বসে থাকতে হয় না।

মাছ ব্যাপারী মো. মনির বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় দীর্ঘ ৪ বছর ধরে এখান থেকে মাছ ক্রয় করে বিক্রি করছি। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির ৪-৫ মন মাছ কেনা হয় বলে জানায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুরুজ মিয়া জামশেদ মিয়া বলেন, মাছ ক্রয় করতে মাঝ রাতের মধ্যেই আখাউড়া আসতে হয়। প্রতিদিন রুই,কাতল, মৃগেল পুটি, কার্প জাতীয় ছোট বড় প্রায় ৪ মনের উপর মাছ কেনা হয়। ওই মাছ গুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় বলে জানায়।

মৎস্য চাষী টিপু চৌধুরী বলেন, ৩টি প্রজেক্ট ৩টি পুকুরে এখন পুরোদমে মাছ বিক্রি তার শুরু হয়েছে। দৈনিক গড়ে ১০-১২ মন মাছ বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন  অনেক সময় ভালো দামের আশায় স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি মিনি ট্রাকে করে বিভিন্ন বাজারেও মাছ বিক্রি করা হয়।

আব্দুল আলিম মিয়া বলেন, বার্ষিক ইজারায় নেওয়া তার ৫টি পুকুর রয়েছে। রুই, কাতল, মৃগেল পুটি, স্বরপুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। সপ্তাহে ৪-৫ দিন ১৫ মণের উপর মাছ বিক্রি হয়। ওইসব মাছ তিনি নিয়মিত আড়তে বিক্রি করছেন।

আড়ৎদার মিন্টু মিয়া বলেন এখানকার মাছের খ্যাতি ও সুনাম দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়নি।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী লোকমান মিয়া জানায়, প্রতিদিন ভোরে রুই কাতলসহ ছোট আকৃতির মাছ ১ থেকে দেড় মন কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করছি। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন বলে জানায়।    

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, এ উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে মাছ চাষে এক নিরব বিল্পব ঘটে চলছে। মৎস্য চাষে এলাকার শতশত যুবকদের যেমন বেকারত্ব দুর হয়েছে পাশাপাশি শতশত লোকের কর্মও সৃষ্টি হয়েছে। মাছ চাষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এসআ

Link copied!