জীবনের গল্প অল্প রেখেই আকাশের ঠিকানায় এন্ড্রু কিশোর

  • শব্দনীল | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২১, ০৪:২৫ পিএম
জীবনের গল্প অল্প রেখেই আকাশের ঠিকানায় এন্ড্রু কিশোর

ফাইল ছবি

ঢাকা : জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, অথবা হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস গানটি শোনেনি এমন সঙ্গীত পিপাসু মানুষ পাওয়া দুষ্কর। সঙ্গীত পিপাসু নয় সাধারণ মানুষও এগানের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে অজস্রবার। শুধু কি তাই “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায়” এগানগুলো এখনও শহরে, গ্রাম-গঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আপন মহিমায়। যার কন্ঠের জাদুতে লোকসঙ্গীত, পপ, চলচ্চিত্রের গান হয়ে উঠেছে সাধারণের কাছে আনন্দ-বেদনার আশ্রয়। তিনি 'প্লেব্যাক সম্রাট' এন্ড্রু কিশোর।

এন্ড্রু কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিন নাম ছিলো এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। পিতা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহীর একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন । ছিলেন সংগীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন ‘কিশোর’। এন্ড্রু কিশোরের পড়াশোনায় হাতেখড়ি মায়ের কাছে। তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে রাজশাহীর অলিগলি হেঁটে।

৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এন্ড্রু কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রেণিতে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগেও পড়াশোনা করেছেন।

১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’  চলচ্চিত্রে “অচিনপুরের রাজকুমারী নেই” গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে এন্ড্রু কিশোরের যাত্রা শুরু হয়। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের “ধুম ধাড়াক্কা”। তবে ১৯৭৯ সালে এ জে মিন্টু পরিচালিত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রে “এক চোর যায় চলে” গানে দর্শক তাকে চিনতে পারে। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, ভালবেসে গেলাম শুধু, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, সব সখিরে পাড় করিতে, ভালো আছি ভালো থেক‘র মতো অসংখ্য আকাশচুম্বি জনপ্রিয় গান।

১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের গীত ও সুরে নয়নের আলো চলচ্চিত্রে তিনটি গান "আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি", "আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন" ও "আমার বুকের মধ্য খানে" কণ্ঠ দেন এন্ড্রু কিশোরক।এই গান তিনটির জন্য তিনি প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

এন্ড্রু কিশোর লোকসঙ্গীত, পপ, চলচ্চিত্রের গান শুধু করেননি, তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান ‘প্রবাহ’ ছিলো তার। লিপিকা অ্যান্ড্রু ইতির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কিশোর। তাদের দুটি সন্তানও আছে। 

লোকসঙ্গীত,গান, চলচ্চিত্রের অবদান রাখার জন্য এন্ড্রু কিশোর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

সঙ্গীতাঙ্গনের এই নক্ষত্র নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেও ক্যান্সার নির্মূল হয়নি প্রখ্যাত এই শিল্পীর। তিনি মাত্র ৬৪ বছর বয়সে ২০২০ সালের ৬ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

সোনালীনিউজ/এসএন

Link copied!