আমি স্কুলে ভর্তি হতে চাই না, খাওন চাই

  • রাহুল এম ইউসুফ, জাবি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০১৭, ০৪:০৭ পিএম
আমি স্কুলে ভর্তি হতে চাই না, খাওন চাই

ঢাকা: হাতে বাদামে ঝুঁড়ি। থরে থরে সাজানো প্রায় ২০টি বাদামের প্যাকেট। প্রতি প্যাকেটের মূল্য ১০টাকা। ১ টা বিক্রি হলেই লাভ হয় ৫টাকা। প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০ টি প্যাকেট বিক্রি হয় তার। আর বাদাম বিক্রির লভ্যাংশ দিয়েই ঘোরে সংসারের চাকা।

কথা হচ্ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সর্বকনিষ্ঠ বাদাম বিক্রেতা মো. শাহীনের সাথে। বয়স ৫ কিংবা ৬ বছর। অক্ষরজ্ঞান বলতে কিছুই নেই তার। চার ভাইয়ের মধ্যে তার অবস্থান তৃতীয়। বড় ভাই সোহেল একই ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করে আর মেজো ভাই বিক্রি করে বাদাম। ছোট ভাইটার বয়স ১ বছর হওয়ায় সে মায়ের কাছেই থাকে। বড় দুই ভাইয়ের ধারাবাহিকতায় শাহীনও নেমে পড়েছে উপার্জনে।

বাবা আজিজুল হক বালু শ্রমিক হিসেবে দিনমজুর। মা নাছিমা আক্তার অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেন। জাবি ক্যাম্পাস সংলগ্ন আমবাগানে ভাড়া বাড়িতে ৬ সদস্যের এ পরিবারের বসবাস।
কথায় এক ফাঁকে শাহীন স্কুলে যাও কি না এমন প্রশ্ন করতেই সে বলে ‘আমি পড়তেও পারি না লিখতেও পরি না। আর স্কুলে কখনও ভর্তি হয়নি। ভর্তিও হবো না। পড়া-লেখা আমার ভাল লাগে না।’

এরপর উৎকন্ঠার সাথে বলে, আমি যদি স্কুলে যাই, পড়ালেখা করি তবে আমার খাওন (খাবার) আসবে কোথা থেকে? তাই আমি বাদামই বিক্রি করবো এবং নিজের খাবার নিজেই ব্যবস্থা করবো।

এ ক্যাম্পাসে শহীনের মতো আরো ৫০ জন রয়েছে যারা স্কুলে না গিয়ে উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে। যেই বয়সে হাতে থাকার কথা ছিল ‘স্বরলিপি’, ‘একের ভিতর তিন’ শিরোনামের বই, সেই বয়সে এসব শিশুর হাতে আছে বাদামের ঝুঁড়ি কিংবা সিগারেট সম্বলিত চায়ের কাপ। এসব শিশুরা যথেষ্ট মেধাবীও বটে। তাদের দরকার শুধু লেখাপড়ার সুযোগ। আর তাতেই এইসব অপ্রাপ্ত শিশুরা হয়ে উঠতে পারে দেশের সম্পদ। কিছুটা সচেতনতা যদি এসব পরিবারের মধ্যে জাগ্রত হয় কিংবা জাগ্রত করানো যায় তবে সমাজে অবহেলিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাবে। এই ছোট্ট শিশুই একদিন হয়ে উঠবে দক্ষ জনশক্তি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেএ

Link copied!