রেড ইন্ডিয়ান

ট্রাম্পের পূর্বপুরুষ এই নগ্ন জাতি! (ভিডিও)

  • হৃদয় আজিজ | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০১৭, ০৪:৩২ পিএম
ট্রাম্পের পূর্বপুরুষ এই নগ্ন জাতি! (ভিডিও)

ফাইল ছবি

ঢাকা: আজকের যে ক্ষমতাশালী ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকাকে দেখছি। যাদের স্টাইল, রাষ্ট্রযন্ত্র, যাদের তৈরি স্যোসালিজম নিয়ে আমরা এত মাতামাতি করি; সেই আমেরিকানরা এক সময় আমাদের এই এশিয়া থেকেই যাওয়া! শুধু কি তাই, তারা এক সময় ছিল নগ্ন জাতি! কী বিশ্বাস হচ্ছে না? আর না হওয়ারই কথা। কারণ, আমরা তো জানি তারা ইউরোপ থেকে গেছে, আর দেখছিও সবচেয়ে ‘সভ্য জাতি’ হিসেবে।

আজ থেকে পাঁচ’শ বছর আগে ১৪৯২ সালে যখন ইউরোপিয়ান ক্যাথলিক নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকার আবিষ্কারের আগে তো আমেরিকার সঙ্গে পৃথিবীর এই অংশের মানুষের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তাদের সম্পর্কে কেউ জানতো না।

বর্তমান রেড ইন্ডিয়ানরা

কিন্তু তারও দুই হাজার বছর আগের ঘটনা। ওই অঞ্চলে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল জাপানের কাছাকাছি এলাকা থেকে বর্তমান বেরিং সাগর হয়ে বরফে ঢাকা ওই পথ দিয়ে মঙ্গলয়েডরা আমেরিকায় গিয়ে বসবাস শুরু করে। এই মঙ্গলয়েডরাই এক সময় পুরো আমেরিকা জুড়ে বসবাস করতে থাকে। কলম্বাস বাহমা ‍দ্বীপে পৌঁছেই তাদেরকে রেড ইন্ডিয়ান বলে পরিচয় করে দেন। 

কলম্বাসের গোপন ডায়েরি থেকে জানা য়ায়, তিনি যখন ওই দ্বীপে পৌঁছেন দ্বীপবাসী অর্থাৎ রেড ইন্ডিয়ানরা তাকে সাদরে গ্রহণ করে। তাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন। আর সেই কলম্বাসের উত্তরসুরিরাই রেড ইন্ডিয়ানদের নির্মমভাবে হত্যা করে রক্তে লাল করে আমেরিকার মাটি।

প্রাচীন রেড ইন্ডিয়ানদের প্রতিকৃতি

কলম্বাস আমেরিকার মাটিতে বসেই স্পেনের রানী ইসাবেলাকে লিখেছিলেন: ‘… এখানকার মানুষজন এতই সুবোধ ও শান্তিপ্রিয় যে, মহামান্য রাজপদে আমি শপথ করে বলতে পারি, সারা দুনিয়াতে এদের চেয়ে ভালো জাতি আর নেই। প্রতিবেশিদের তারা একান্ত আপনজনের মতোই ভালবাসে। তাদের আচার আচরণও অতীব ভদ্র এবং মিষ্টি। এটা অবশ্য ঠিক যে তারা বেশ কিছুটা নগ্ন…।’

রেড ইন্ডিয়ান নাম শুনে মনে হতে পারে এরা বুঝি লালচে বর্ণের মানুষ। কিন্তু আদৌ তা নয়। বরং এরা বাদামী এবং ঈষৎ কৃষ্ণ বর্ণের। ইতিহাস থেকে জানা যায় তারা যখন যুদ্ধে যেতো, তখন গায়ে লাল রঙ মাখত। সেই থেকে রেড ইন্ডিয়ান, রেডম্যান কিংবা রেড স্কিন – অর্থাৎ লাল চামড়ার লোক বলে এরা পরিচিত হয়ে ওঠে। তবে মার্কিনিরা এখন তাদের নেটিভ অব আমেরিকান বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করে।

শিক্ষিত আমেরিকান আদিবাসীর সন্তানরা

ছোট-বড় অনেক গোত্র এবং উপগোত্রে বিভক্ত ছিল তারা। গোত্রের সবচেয়ে বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিটি হতেন গোত্রপতি। এবং অবধারিতভাবে তার ঘাড়েই তখন বর্তাতো গোত্রের যাবতীয় দায়িত্ব।

গোত্রপতির বেশভূষা ছিল ঘাড়অব্দি লম্বা চুল; গলায় ও কানে ঝুলাতেন ধাতব অলংকার। একেবারে পশ্চিমাঞ্চলে যারা বসবাস করত তারা ছিল সংখ্যা ও ক্ষমতার বিচারে সবচেয়ে সেরা গোত্র। নাম ছিল সিউ। এদের আরেক নাম ডাকোটারা। সুদীর্ঘ আড়াই’শ বছর এরা লড়াই করেছে স্পেনীয় শেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে।

জীবনযাপনে জটিলতা ছিল না; তরা ছিল পরিশ্রমী জাতি। দিগন্ত বিস্তৃত ঘেসো জমিতে এরা চড়াত ছাগল, ঘোড়া আর ভেড়ার পাল। আর চাষযোগ্য জমিতে ফলাত ভুট্টা, গম, ফলমূল ইত্যাদি। মাঝে মাঝে গভীর অরণ্য থেকে শিকার করে আনত বুনো মোষ, হরিণ ও ভল্লুক। সেসবের মাংশ রোদে শুকিয়ে বা আগুনে ঝলসে দিব্যি চলত ভুড়িভোজ। আর শিকারকৃত পশুর চামড়া দিয়ে বানাত পায়ের জুতো, হাতের দস্তানা ও কানটুপি। বেশ বৈচিত্রপূর্ণ ছিল কোনো কোনো গোত্রের খাদ্যাভ্যাস। 

উনিশ শতকের শেষের দিকের দুই রেড ইন্ডিয়ান শিশুর ছবি

গোত্রে গোত্রে চলত সাংস্কুতিক উৎসব। বছরান্তে টোটেনরা মেতে উঠত ‘সূর্য্য নাচ’ উৎসবে। এটা তাদের বাৎসরিক ধর্মীয় পুণর্মীলনী উৎসব। আর সিউরা পালন করত প্রেতনৃত্য। নেচে গেয়ে এসব অনুষ্ঠানে ঈশ্বরের স্তুতি বর্ণনা করা হতো আর তার নিকট প্রার্থনা করা হতো কৃপা। 

আবার চেইনীরা পালন করত ভিন্নধর্মী এক অনুষ্ঠান যার নাম মেডিসিন অ্যারো। মেডিসিন অ্যারোর দিন নেকড়ের চামড়ায় তৈরি ব্যাগ থেকে চারটি গুপ্ত তীর মেলে ধরেন কোনো একজন তীর রক্ষক। আর গোত্রের সকল পুরুষ একে একে তীরগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অর্ঘ্য নিবেদন করে এবং প্রার্থনা জানায় তীরগুলোর কাছে।

এদের সর্বজনীন কোনো ধর্ম না থাকলেও গোত্র ভেদে আলাদা আলাদা ধর্মাচার বেশ নিষ্ঠার সাথেই পালিত হতো। তবে একটা বিষয়ে সব গোত্রই ছিল ঐক্যমত। সেটা ব্ল্যাক হিলস। ব্ল্যাক হিলসকে প্রত্যেক ইন্ডিয়ানই মনে করত পবিত্রতম স্থান। 

২০১৫ সালে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আলাস্কা সফরের সময় নেটিভ আমেরিকানদের বিক্ষোভ

সেই যে ১৪৯২ সালের পর থেকে নানা জাতের ইউরোপীয় শেতাঙ্গরা দলে দলে পাড়ি জমাতে শুরু করে নব্য আবিষ্কৃত ওই ভূখণ্ডে। শুরু হয় কলোনাইজেশন তথা বসতিস্থাপন, জবরদখল, হত্যা ও লুণ্ঠন। আপন অস্তিত্ব বাঁচাতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রেড ইন্ডিয়ানরা। তবু শেষ রক্ষা হয় না। একে একে ব্যর্থ হয়ে যায় তাদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধের যাবতীয় প্রচেষ্টা; যার আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে ‘উ্যনডেড নি’ এক পার্বত্য খাড়ির বাঁকে। খ্রীষ্টিয় পঞ্জিকা মতে, দিনটি ছিল ১৮৯০ সালের ২৯ ডিসেম্বর।

সুদীর্ঘ চারশ বছরের সংগ্রামের পর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি এই অধিবাসীরা। এখন তারা নিজেদেরকে সুশিক্ষিত করে তুলছে। ইতোমধ্যেই তারা আয়ত্বে এনেছে আইন, অর্থনীতি ও রাজনীতির বহুমুখী কলাকৌশল। তারা স্বাক্ষর রাখছে শিল্পকলা ও বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ইতিহাস, সাহিত্য ও কলায়।

উনিশ শতাব্দির শেষের দিকে তোলা এক রেড ইন্ডিয়ান পরিবারের ছবি

তবে আজও তারা অপরাপর আমেরিকানদের মতো গৃহায়ণ ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নিদারুণ উদ্বেগজনক। অসংখ্য অন্যায় অবিচার আজও ডুকরে মরছে প্রতিকারের আশায়। তাইতো ২০১৫ সালে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আলাস্কাসহ রেড ইন্ডিয়ান এলাকা সফরে গিয়েছিলেন। তখন তার ওই সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল স্থানীয় অধিবাসীরা।

আশার কথা হলো- যুক্তরাষ্ট্রের আইনে তাদের ইতিহাস, স্থাপনা ও এলাকা সংরক্ষণের জন্য বলা হয়েছে। 

তথ্যসূত্র: হিসটরি ডটকম, অ্যানসাইক্লোপেডিয়া, ইউকিপিডিয়া, ডি ব্রাউনের লেখা: বারি মাই হার্ড অ্যাট উনডেড নি।

ভিডিও:

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Link copied!