রংপুরে আলুর বাম্পার ফলন তবুও দাম নেই

  • ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০১৮, ১২:০৫ পিএম
রংপুরে আলুর বাম্পার ফলন তবুও দাম নেই

রংপুর : এবার রংপুর অঞ্চলে আলুর বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আলু উৎপাদন বাড়ালেও মিলছে না চাহিদানুয়ারী দাম। দাম না থাকায় আলুর সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ২৭৫ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৫ হাজার ৩৮৫ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৬ হাজার ২৩১ হেক্টর, নীলফামারীতে ২২ হাজার ২৭০ হেক্টর ও গাইবান্ধায় ৭ হাজার ৫৮৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। এবার রংপুর বিভাগে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে।

রংপুর মহানগরীর তামপাটসহ পাশ্ববর্তী পারুল, পায়রাবন্দ, কল্যাণী, মাহিগঞ্জ, সাতমাথা, সারাই, পীরগাছা, দেউতি, মাছহাড়ি, মীরবাগ, সাতদরগা, ইটাকুমারি এলাকায় গত বছরের চেয়ে এবার আলুর বাম্পার উৎপাদন হয়েছে।

রংপুর মহানগরীর উত্তম হাজিরহাট, তপোধন, কেরানীহাট, শ্যামপুর, পালিচড়া, তামপাট দুলাল মুন্সিরপাড়া, বকচি, মীরগঞ্জ, কাইদাহারা, রঘু, দেউতি, নব্দীগঞ্জ, পায়রাবন্দসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, এ বছর কোন জমি পতিত নেই। বিস্তৃর্ণ জমিতে কৃষকরা আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রতিটি কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক লেগে থাকলেও রয়েছে দাম নিয়ে শঙ্কা। বেশির ভাগ আলুচাষী বিভিন্ন এনজিওসহ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলুর চাষ করেছে।

রংপুরের দেউতি পারুল নদীরপাড়ের কৃষক ফুলু মিয়া ও শাহ আলম বলেন, এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে  সঠিক দাম না থাকায়  চিন্তায় আছি। যদি দাম না বাড়ে তাহলে মাঠে মারা যাবো। অনেক লোকসান হবে। কারণ ধার-দেনা করে আলু চাষ করেছি। একই কথা জানালেন, রংপুর সদরের জানকি ধাপেরহাট রামজীবন এলাকার মনজুরুল ইসলাম ও পীরগাছার হাউদারপাড়ের কৃষক মনজু মিয়া।

রংপুর মহানগরীর আরাজী তামপাট দুলাল মুন্সির বাড়ি এলাকার কৃষক আশরাফুল আলম জানান, প্রায় ৪ দোন জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। গত বছরের চেয়ে এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। ভাল দাম না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রতি দোন (২৪ শতক) আলুর জমিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি দোনে আলুর ফলন কমপক্ষে ৮০ উপরে ১২০ মন পর্যন্ত আসে।

তিনি আরও জানান, সরকার যদি আলু বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ করে দেয় তাহলে আলু চাষীদের লোকসান গুনতে হবে না। একই আজিজুল্লাহ রঘু ও মেকুড়া, হোসেন নগর, তালুক তামপাট এলাকার কৃষক তপন কুমার রায়, রফিকুল ইসলাম ও রাজু মিয়াসহ অনেকেই।

অন্যদিকে সাতমাথা বালাটারি এলাকার কৃষক আফজাল পাটোয়ারি জানান, আমরা অনেক পরিশ্রম করে আলুর আবাদ করেছি। তাই এ বছর ফলনও ভালই হয়েছে।  কিন্তু আলুর দাম না থাকায় এ বছর কৃষকের লোকসান গুনতে হবে। যে সব কৃষকের নিজস্ব জমি নেই তারা মানুষের জমি লিজ নিয়ে আলুর আবাদ করেছে। যদি আলুর দাম না বাড়ে তাহলে শতাধিক কৃষকের কপানে দুঃখ আছে।

অন্যদিকে একই এলাকার কৃষক ইসরাফিল মিয়া জানান, আমাদের একমাত্র ভরসা সরকার। যদি সরকার যেভাবে কৃষকের ধানের দাম বাড়িয়েছে, সেভাবে যদি সরকার আলুর মূল্য বৃদ্ধি করতো তাহলে আমাদের মত কৃষকের লোকসান গুনতে হত না।

এ ব্যাপারে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম বলেন, চলতি রংপুর জেলাসহ রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৯২ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় বেশী। এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর কৃষকরা উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল আলুর বীজ এস্টোরিজ, কার্টিনাল, বগুরিয়া, স্টিক, ক্যারেজ বেশি পরিমানে আবাদ করেছেন ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!