ঈদের ডিজিটাল শুভেচ্ছায় কেউ কেউ স্মৃতিকাতর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০১৮, ০৫:৪৬ পিএম
ঈদের ডিজিটাল শুভেচ্ছায় কেউ কেউ স্মৃতিকাতর

ঢাকা : ঈদকে সামনে রেখে প্রিয় মানুষদের কেউ যদি শুভেচ্ছা বার্তাসহ একটি কার্ড পাঠিয়ে দেয় আপনার কাছে, তবে নিশ্চয়ই চমকে যাবেন। ডিজিটাল যুগে কাগুজে কার্ড চমকে যাওয়ার মতো একটি ব্যাপারই বটে। অথচ মাত্র ১৫-১৬ বছর আগেও ঈদের মতো উৎসবে কাগুজে কার্ডের ব্যাপার ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কাগুজে কার্ডে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এদেশে ব্যাপক হারে শুরু হয় গত শতকের ৯০-এর দশকে। সেদিন এখন ফুরিয়েছে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার আর মোবাইল নম্বরেই এখন ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হয়। কেউ কেউ মনে করেন, শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাবার এই ডিজিটালাইজেশন মানুষের সৌহার্দ্যকে অনেক ফিকে করে দিয়েছে। তবে ঈদের দিন কিংবা নামাজ শেষে কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতিটি এখনো প্রচলিত আছে।

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, উপমহাদেশে বিভিন্ন সময়ে রাজা, বাদশাহ, সম্রাট, সুলতান কিংবা বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাবশালী জমিদাররা বিভিন্ন সময়ে কিংবা উপলক্ষে একে অপরের সঙ্গে দূত মারফত কুশল বিনিময় করতেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে এটির প্রচলন ছিল না বললেই চলে।

পরবর্তীকালে ইংরেজ শাসনামলে ‘বড়দিন’ উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটা প্রভাব এ অঞ্চলের মানুষের ওপর পড়ে। কালের বিবর্তনে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবে মৌখিক কিংবা চিঠির মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় প্রচলিত হতে শুরু করে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ফুল, কার্ড কিংবা চকলেটসহ বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্য ও আকর্ষণীয় সামগ্রীর। নারীদের কেউ কেউ তার প্রিয় মানুষদের ফুল তোলা রুমাল উপহার দিত।

মোবাইল আর কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাগুজে ঈদ কার্ডের চাহিদা কমছে। ইন্টারনেটে শুভেচ্ছা কার্ডের একাধিক সাইট আছে। এখান থেকে এক বা একাধিক কার্ড বাছাই করে মানুষ বিনামূল্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে।

বর্তমানে মোবাইলের বাটন টিপে মানুষ ইচ্ছে করলেই যেকোনো সময় তার প্রিয় মানুষটির কণ্ঠ শুনতে পারে, পাঠাতে পারে একান্ত নিজস্ব শুভেচ্ছা বার্তা, যা একটা সময় কল্পনায় সম্ভব ছিল না। ঈদ কার্ডের যুগে মানুষের আবেগ অনুভূতিগুলো আরো গাঢ় আর তীক্ষ ছিল বলে দাবি করেন অনেকে। এক্ষেত্রে দ্বিমত করার কোনো উপায় নেই। কারণ, এখন যেমন বাটন টিপে সহজেই প্রিয় মানুষ আর বন্ধুদের শুভেচ্ছা পাঠানো যায়; সেকালে এটা করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। তবে এই আধুনিক সময়ে যেমন ঈদের আগের রাতে বাঁকা চাঁদের বর্ণনা দিয়ে কোনো যুবক তার প্রিয় মানুষটিকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায় তা-কি সেকালে সম্ভব ছিল?

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!