সুচের ফোড়ে প্রতিবন্ধী নারীর স্বপ্ন পূরণ

  • ভোলা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮, ০৭:৩৫ পিএম
সুচের ফোড়ে প্রতিবন্ধী নারীর স্বপ্ন পূরণ

ভোলার লালমোহনের শারীরিক প্রতিবন্ধী জেসমিন বেগম। ছবি: সোনালীনিউজ

ভোলা : সমগ্র বাংলাদেশের নারীদের মতো ভোলার লালমোহনের নারীরাও এখন আর পিছিয়ে নেই। তারা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাবলম্বী হতে শিখেছে। তারা এখন আর অবলা নয়। ঘর সংসারের গন্ডি পেড়িয়ে তারা আজ নিজস্ব কর্ম সংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি তথা নিজের অধিকার অর্জন করে নিজের পায়ে দাড়াতে শিখেছে।

নারীর পায়ের শিকল আর পরাধীনতা এখন কেবল অতীত। সকল নারীদের কর্মক্ষেত্রের অন্যতম অবলম্বন নকশী কাঁথা। তরুণী, অর্ধশিক্ষিত, স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধী নারীরা এই পেশার সঙ্গে বেশি জড়িত হচ্ছে।

দারিদ্র্যতার কারণে বেশি দুর এগোয়নি তাদের শিক্ষার গন্ডি। অনেকটা পরিবারের বোঝা হয়েই দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু সুচের ফোড়ের কল্যাণে পাল্টে গেছে তাদের জীবনের রং।

এখন আর বোঝা নয় বরং নিজে স্বাবলম্বী হয়ে হয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করে কাটছে তার বর্তমান সময় ও জীবন। এমন পরির্বতনে ভাগ্য বদলে দিয়েছে সুই আর সুতার যাদুকরী মিলনে তৈরি হওয়া বাহারি নকশী কাঁথা। কোমল হাতের ছোয়ায় আর মননের মিশেলে গ্রামীণ পটভূমির নারীরা নকশি কাঁথায় ফুটিয়ে তোলেন মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত প্রেম ভালোবাসার বহি:প্রকাশ ফুল,পাখিসহ নানা আল্পনার সৃষ্টির মাধ্যমে।

ভোলার লালমোহনের শারীরিক প্রতিবন্ধী জেসমিন বেগম এ ধরনের স্বাবলম্বীতার জলন্ত দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, আল্লাহ অসুখ দিয়েছেন, কিন্তু তাই বলে আমি পরিবারের ও সমাজের জন্য বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমি কাজ করে, পরিশ্রম করে বেঁচে থাকতে চাই এই সুন্দর এই সুন্দর পৃথিবীতে।

আর তাই মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন নকশী কাঁথা আর শাড়িতে আল্পনা সেলাই করছি। মোটামুটি ভালোই অর্ডার পাচ্ছি। সরেজমিনে দেখা যায়, খুব মনযোগ সহকারে বিভিন্ন বয়সের নারীরা সুই আর সুতার কাজ করছে সুতা আর সুচের কারুকার্যময় কাপর বুননের নানা উপকরণ নিয়ে চলছে তাদের কর্মব্যস্ততা।

যেন একটি সুচের ফোড়ে একটি নারী আর তার পরিবারের স্বপ্ন বুনন চলছে। রাবেয়া, রোজিনা, সালমাসহ একধিক দারিদ্র্য কিশোরী জানায়, আগে ঘরে বসে অলস সময় কাটাতাম কিন্তু এখন ঘরে বসে টাকা আয় করছি এবং পরিবারের দারিদ্র্যতা ঘোচানোর চেষ্টা করছি।

কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা অথবা বিসিক যদি এই রকম সেলাইয়ের কাজ, এমব্রোয়াডারির কাজের ব্যাপারে আমাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি বাজারজাত করণের কৌশল শেখাতো তাহলে আরো নারীর বেকার না থেকে এই কুটির শিল্পের পেশার সঙ্গে জড়িত হয়ে দেশের অর্থনীতি ও নিজের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে গ্রামীণ এই বিশাল নারীগোষ্ঠীকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে হতাশার বিষয় রূপান্তরিত করতে পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Link copied!