এটায় আমার লজ্জা নেই, এটা বাংলাদেশের লজ্জা!

  • নাজাম নুরুল মিন্টু | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২১, ২০১৭, ০৪:০৭ পিএম
এটায় আমার লজ্জা নেই, এটা বাংলাদেশের লজ্জা!

ছবিটি প্রতীকী

পূর্ণিমা’র কথা মনে আছে? সেই যে ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাতের স্থানীয় নেতারা ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েটাকে ১০-১২ জনের একটি দল বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নিয়েছিল মালাউনদের সবক শেখাতে! মায়ের সামনেই সম্পূর্ণ বিব্রস্ত্র করে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয় তাকে। অষ্টম শ্রেণীর একটি বাচ্চা মেয়ের পক্ষে কি সম্ভব এতগুলো পশুর শরীরের চাহিদা মেটানো! মেয়ের মৃত্যু ভয়ে পূর্ণিমার মা বলেছিলেন, ‘বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট। তোমরা একজন একজন করে এসো, মরে যাবে।’

না পূর্ণিমা মরে নি! সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার দেলুয়া গ্রামের অনিল কুমার শীলের পরিবারের ওপর ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ রাতে চালানো হয় বর্বরতম অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন। রাতে জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে অত্যাচার-নির্যাতনের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা অনিল শীলের ছোট মেয়েকে তুলে নিয়ে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ঘটনার ৩/৪ দিন পর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ধর্ষিত ছাত্রী ও তার পরিবারকে সাংবাদিদের সামনে হাজির করলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

আমাদের বোন পূর্ণিমাকে দীর্ঘ ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে সেই ধর্ষণের বিচার পেতে। তবে ফাসিঁ নয়, ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা। যদিও ৬ জন পলাতক এবং ৬ জন খালাস পায়।

তারপর আজ ১৫ বছর কতটা বদলে গেছে পূর্ণিমার জীবন! আজ তার বয়স ২৮ বছর। এইতো কিছুদিন আগেও সে চাকরি করতো। একদিন আবিষ্কার করে ফেসবুকে তার ছবি এবং নাম দিয়ে একটি আইডি খোলা। সেই আইডি থেকে নানা রকম অসভ্য ছবি, অসভ্য কথা এবং পূর্ণিমার মোবাইল নম্বর পোস্ট করা হচ্ছে। আজকের পূর্ণিমাকে থামিয়ে দিতে তাকে মূলত টার্গেট করা হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। 

পূর্ণিমা চাকরি করেই পড়ালেখা শেষ করে। তার কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের অনেকেই সেই আইডির সাথে যুক্ত। তারা তাদের সহকর্মীর আইডি ভেবেই তাকে যুক্ত করেছে বন্ধু তালিকায়। তারপর একদিন তাদেরই কেউ কেউ তাকে বলে বসলো, ‘কি রে দোস্ত তুই এসব নোংরা ছবি পোস্ট করছিস! তুই কি এসব করে খাস!’ আরেকজন তো আরো একধাপ এগিয়ে জানতে চায়, ‘কত টাকা চাই তোর’। 

পূর্ণিমা জানে না, ফেসবুকের পেছনের মানুষটি আসলে কে! পূর্ণিমা জানায়, ‘স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি তিনটা জীবনেই আমাকে অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। এসব কারণে আমি রাস্তায় হাটতেও পারিনি। অনেকে আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছে এই সেই মেয়েটা! অনেকে আমাকে রাস্তায় চুলের মুঠি ধরেও মেরেছে!’ পূর্ণিমা অসহায়ভাবে জানতে চায়, ‘কেন এটা বারবার হচ্ছে আমার সাথে? কেন হচ্ছে?’

পূর্ণিমা আবার তার নামে কোন পেজ আছে কিনা চেক করতে দেখে তার সহর্মীরা তাকে বলে, ‘পূর্ণিমা, তোমার কি লজ্জা বলতে কিছু নাই?’ পূর্ণিমা জবাব দেয়, ‘এটায় আমার কোন লজ্জা নেই। এটা বাংলাদেশের সমাজের লজ্জা।’

সোনালীনিউজ/ এসও

Link copied!