বাবাকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করলেন মীর, পাশে তসলিমা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০১৭, ০৩:৩১ পিএম
বাবাকে আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করলেন মীর, পাশে তসলিমা

ঢাকা : কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদে ঈদের নামাজের পর বাবার সঙ্গে একটি ছবি তোলেন বাচিকশিল্পী মীর আশরাফ আলী। সেটি পোস্ট করে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, তার বাবাই তার আল্লাহ। আর এই ছবি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বিতর্ক। প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েন মীর। আর এ অবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

এ ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তসলিমা লেখেন- “আমার মায়ের গল্প” নামে আমার একটি কবিতা অনেক বছর আগে দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। একদিন শুনি দেশের ওই সংখ্যাটি আমার কবিতার কারণে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। কবিতায় কী এমন ছিল যে নিষিদ্ধ হলো গোটা পত্রিকা, বুঝে পেলাম না। পরে শুনলাম ওই কবিতায় আমি আসমান জমিনের মালিক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাকে ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছি, সেটিই সরকারকে রাগিয়েছে। 

কবিতাটিতে ছিল ক্যানসারে আমার মা মারা যাচ্ছেন সেই দৃশ্যের বর্ণনা এবং পরকালে তিনি বেহেস্তে যাচ্ছেন সেটির কল্পনা। ওই কল্পনার মধ্যে ছিল মা বেহেস্তের বাগানে হাঁটছেন, এমন সময় আল্লাহ তায়ালা মাকে স্বাগত জানাতে এলেন, মার খোঁপায় গুঁজে দিলেন লাল একটি গোলাপ। 

দেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক গোষ্ঠী ভীষণ বিপদে পড়ে গেলেন। এর কিছুকাল পর দেশের একটি সংখ্যা আমার ওপর করেছিলেন ওঁরা। প্রচ্ছদ জুড়ে ছিল আমার ছবি, ভেতরে আমার লেখা, আমাকে নিয়ে কয়েকজন মনীষীর লেখা। ওই সংখ্যাটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য ছাপা হয়েছিল। অন্য লেখা টেখা ভরে, যেখানে আমার বিন্দুমাত্র কিছু নেই, একই তারিখে ভিন্ন এক দেশ ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশে বিক্রি হওয়ার জন্য।

মীরাক্কেলের মীর Mir Afsar Ali তার বাবাকে আল্লাহ বলে ডেকেছেন- এই নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড হচ্ছে দেখে মনে পড়লো আমার সেই কবিতার কথা। কবিতা নিষিদ্ধ হওয়ার সময় আমি বাংলাদেশে থাকলে হয়ত কুপিয়ে আমাকে দু টুকরো করতো বাংলার বীর মুসলমানেরা। মাথায় টুপি পরে মীর কাল ঈদের নামাজ পড়েছেন, তারপরও তাকে রেহাই দেয়া হয়নি। 

মীর লিখেছিলেন ‘আমার আব্বা... আমার আল্লাহ ঈদ মোবারক’। বাবাকে তিনি আল্লাহর সঙ্গে তুলনা করেছেন। যে আল্লাহকে তিনি কোনওদিন দেখেন নি, যার কণ্ঠস্বর শোনেন নি, যাকে কোনওদিন স্পর্শ করেন নি, যার গন্ধও কোনওদিন পাননি। শত সহস্র লোক বিশ্বাস করে আল্লাহ উদার, মহান, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী। মীর নিশ্চয়ই তার বাবাকেও তাই মনে করেন। উদার, মহান, ইত্যাদি। আসলে আল্লাহ একটি প্রতীকের মতো। সর্বশক্তিমানের প্রতীক। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে এখনও সংশয় আছে, অর্থাৎ এখনও তার অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, প্রতীক হিসেবে তার নামখানা ব্যবহার করা যেতেই পারে।

বাউল-ফকিরেরা, সুফি গায়কেরা অনেক সময় আল্লাহকে ভালোবেসে যা ইচ্ছে তাই বলে ডাকেন। আল্লাহর নাম জিহাদি সন্ত্রাসীরাও নেয়। ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চাপাতি চালিয়ে নিরীহ মানুষকে খুন করে। কোথাও ‘আল্লাহু আকবর’ চিৎকার শুনলে মানুষ আজকাল ভয়ে উল্টোদিকে দৌড়োয়। মীর কোনও দোষ করেন নি। তিনি আল্লাহ নামটি কাউকে ঘৃণা করে, কাউকে অবজ্ঞা-অপমান করে, ব্যবহার করেন নি। মীর তার বাবাকে অতি ভালোবেসে ‘আল্লাহ’ বলেছেন। ভালোবাসা অপরাধ হলে মীর অপরাধী।

সোনালীনিউজ/ এসও

Link copied!