নায়ক-পরিচালকের কাণ্ড!

  • ফেসবুক-থেকে ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০১৭, ০১:৩৫ পিএম
নায়ক-পরিচালকের কাণ্ড!

রাজনীতি ছবির একটি দৃশ্যের ছবি

ঢাকা: গত ঈদুল ফিতরে ঢালিউড সুপাস্টার শাকিব খান অভিনিত ‘রাজনীতি’ ছবি মুক্তি পায়। ঢাকাই চলচ্চিত্র পাড়ায় যখন মন্দায়; যৌথ প্রযোজনায় নিভু নিভু চলছিল, তখন শাকিব-অপু দম্পতির এই ছবিটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। তবে ছবির কিছু অসংগতির কারণে প্রায় চার মাস পর ছবিটি আবারো আলোচনায়। 

এবার ভিন্ন একটি ব্যাপার নিয়ে, সেটা হলো ছবিতে শাকিব খানের সংলাপের এক পর্যায়ে একটি মোবাইল নম্বর দেয় সেটা নিয়েই এবারের আলোচনা। বিষয়টি যখন আলোচনায়, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে জেষ্ঠ্য সাংবাদিক নিয়ন মতিয়ুল ‘নায়ক-পরিচালকের কাণ্ড!’ শিরোনামে ছবিটির পরিচালকের কাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেছেন। সোনালীনিউজের পাঠকের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

(হাতে অলস কিছু সময় থাকলে পোস্টটি পড়তেও পারেন)

ছবির নাম ‘রাজনীতি’, নায়কের নাম শাকিব খান, নায়িকার নাম অপু বিশ্বাস পরিচালকের নাম বুলবুল বিশ্বাস। ছবিটার দৈর্ঘ ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিট ১১ সেকেন্ড। ছবি শুরুর ২৬ মিনিট ১১ সেকেন্ডের মাথায় নায়ক-নায়িকার রোমান্টিক সংলাপের ধরনটা এ রকম-
নায়িকা : এভাবে বারবার আর কোনো দিন চলে যেতে দেব না আমার স্বপ্নের রাজকুমার।
নায়ক : আমিও তোমাকে আর ছেড়ে যাব না রাজকুমারী।
নায়িকা : আমার ফেসবুক আইডি যে ‘রাজকুমারী’ তুমি তা জানলে কী করে?
নায়ক : যেভাবে তুমি জানো আমার মোবাইল নম্বর- ০১...।

সরি, হয়তো ভাবছেন, আমি ছবি প্রচারণায় নেমেছি। না, আমার কথা হচ্ছে, উপরে নায়কের সংলাপের শেষে মোবাইল নম্বরে ০১... লিখে বাকিটা যে হাইড (গোপন) করলাম তাতে আপনার কৌতুহল হচ্ছে না? নম্বরটা জানতে ইচ্ছে করছে না? হাজার হলেও নায়কের নম্বর বলে কথা।

কেউ বলবেন, কী প্রয়োজন নম্বর জানাটা। ওটা তো ছবির বিষয়। ছবি তো নাটক, যা সাজানো। ছবিতে কল্পনার মধ্য দিয়ে বাস্তবতা দেখানো হয়। কেউ বলবেন, ছবিতে নায়কের ফোন নম্বর নায়িকা জানতেই পারে। কিন্তু সেটা দর্শকদের জানার কোনো প্রয়োজনই নেই।

Shakib Khan

প্রশ্ন হচ্ছে- কোনো ছবিতে যদি নায়কের মোবাইল নম্বর হিসেবে সবগুলো ডিজিট (১১ ডিজিট) প্রকাশ করা হয়, তাহলে কী হতে পারে?

হুম, এই প্রশ্নের জটিল একটা উত্তর নিয়ে গতকাল রোববার (২৯ অক্টোবর, ২০১৭) দিনভর গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম হয়েছে। উত্তরের নায়ক হবিগঞ্জের রিকশাচালক ইজাজুল মিয়া। রাতেই একুশে টিভিতে লাইভে এসেছিলেন। তার চরম দুর্ভোগের কথা অনেকের হাসির খোড়াক যোগালেও আমার কাছে অনেক বড় মনে হলো।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) দেশের শীর্ষ এক দৈনিকে খবরটা দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় বক্সে ছাপা হয়েছে। অন্য জাতীয় দৈনিকগুলোতেও খবরটা এসেছে। খবরের মূল সারাংশ হচ্ছে- নায়ক শাকিব খানের মোবাইল ফোন নম্বর হিসেবে ‘রাজনীতি’ সিনেমায় যেটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা গ্রামের অটোরিকশা চালক ইজাজুলের।

ইজাজুলের অভিযোগ, ছবিতে নম্বরটি প্রকাশ হওয়ার পর গেল ৭ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মাত্র এক সপ্তাহে শাকিব খানকে সন্ধান করে ৪৩২টি কল আসে তার ফোনে। শুধু তাই নয়, তিনি যে শাকিব খান নন, সেটা বার বার দাবি করা সত্ত্বেও তাকে যাচাই করতে খুলনা থেকে এক মেয়ে সোজা গিয়ে হাজির হয় তার বাড়িতে। এ নিয়ে বাবা-মা আর তার স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় ইজাজুলের। তার দাম্পত্য জীবন ভেঙে যাওয়ার উপক্রমও হয়েছে। তার জীবিকা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

নিরূপায় ইজাজুল অবশেষে রোববার (২৯ অক্টোবর, ২০১৭) হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা জাহানের আদালতে বিচার প্রার্থী হয়েছেন। ৫০ লাখ টাকার মানহানি ও প্রতারণার অভিযোগ মামলা করেছেন রাজনীতি সিনেমার পরিচালক, প্রযোজক ও নায়কের বিরুদ্ধে। মামলা তদন্ত করে পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

রাজনীতি ছবির পরিচালক বলছেন, সিনেমায় যে নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে তা সরল বিশ্বাসে। ঘটনা একেবারেই কাকতালীয়। আর নায়ক শাকিব বলছেন, তিনি এসবের কিছুই জানেন না। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী বলছেন, কারো অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন আমার ( নায়ক শাকিব খান ছবির সংলাপে যেভাবে বলেছেন) বলে প্রচার করা একটি প্রতারণা। তার অভিযোগ, মোবাইল ফোন নম্বর ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ায় বাদীকে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হয়েছে ফোন রিসিভে। এতে তার অটোরিকশা চালনায় দারুণ বিঘ্ন ঘটেছে। আর্থিকভাবে বাদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘রাজনীতি’ সিনেমার প্রচার বন্ধের আবেদনও করেছেন বাদী।

উপসংহার কী দাঁড়ালো?
সিনেমা হচ্ছে মানুষের স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে ব্যবসা। আমজনতা যতক্ষণ সিনেমা দেখে ততোক্ষণই স্বপ্নের মধ্যে ডুবে থাকে। সিনেমা হলের আলো আঁধারীতে ছেলেরা শাকিব হয়ে অপুকে পাওয়ার ফ্যান্টাসিতে মজে থাকে। আর মেয়েরা ডুবে থাকে শাকিবে। সেই ফ্যান্টাসি আক্রান্ত করে থাকে বাস্তবের জীবনকে। অবশ্য সফল সিনেমার অবদান এমনই হওয়ার কথা।

আর আমাদের পরিচালকারা স্বপ্নব্যবসার দারুণ মুনাফালোভী। তবে আমজনতার স্বপ্নের কথা তাদের মাথায় থাকে না। মানুষের স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে কল্পনা আর বাস্তবতাকে গুলিয়ে ফেলেন। তাদের স্বপ্নের ব্যবসার ফাঁদে কত তরুণ-তরুণী যে অবাস্তব রোগে ভুগে বিপন্ন হয় তার ইয়ত্তা নেই। এ ঘটনা থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের অধঃগতির একটা মুখ্য কারণ পাওয়া গেল।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Link copied!