২০ দলীয় জোটে আবারও ভাঙন

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১, ০৮:৩৬ পিএম
২০ দলীয় জোটে আবারও ভাঙন

ফাইল ছবি

ঢাকা : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে আরও একটি দল। জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে শুক্রবার (১ অক্টোবর) মজলিসে শুরার বৈঠক ডেকেছে খেলাফত মজলিস। এই দলটি জোট ছেড়ে গেলে জোট ছাড়বে মোট পাঁচটি দল। ২০১৬ সালের ৭ জুন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট।

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় লেবার পার্টি। ২০১৯ সালের ৬ মে ২০ দল ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিভ রহমান পার্থ। সবশেষ গত ১৪ জুলাই জোট ছেড়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।

মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় শুরার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে বলে জানিয়েছেন একাধিক শীর্ষ নেতা।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বলেন, ‘আমাদের দলের মজলিসে শুরার বৈঠক রয়েছে। সেখান থেকে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে জোট ছাড়ার সম্ভাবনা আছে। আবার যেহেতু কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি, তাই বলা যেতে পারে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।’

আবদুল জলিল জানান, মজলিসে শুরার বৈঠকের পর বিকেল চারটায় পল্টনের সিগ্যাল রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।

কী কারণে জোট ছাড়ার আলোচনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু এখনও চূড়ান্ত নয়, তাই এখনই বলা যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে আসুন, সব জানতে পারবেন।’

দলের প্রচার সম্পাদক আব্দুল হাফিস খসরু বলেন, ‘মজলিসে শুরার বৈঠকে জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সর্বশেষ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে শুরায় বৈঠক হবে।’

১৯৯৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি, গোলাম আযমের জামায়াতে ইসলামী ও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় বিএনপি।

২০০১ সালে এই জোট ক্ষমতায় আসার পাঁচ বছর পর ২০০৬ সালে আজিজুল হক জোট থেকে বেরিয়ে যান। ইসলামী ঐক্যজোট থেকে বের হয়ে যায় তার দল খেলাফত মজলিস।

সে সময় মাওলানা ইসহাক খেলাফত মজলিস থেকে বের হয়ে একই নামে আরেকটি দল গঠন করে জোটে থেকে যান। সঙ্গে আসেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি আহমাদ আবদুল কাদের। আশির দশকে ইরান বিপ্লবের পর শিবিরে যে ভাঙন ধরে, সে সময় কাদের শিবির থেকে বের হয়ে যান।

ইসহাক মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে গঠিত গভর্নর আবদুল মুতালিব মালেকের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার কারাদণ্ড হয় দালালির কারণে। তবে পরে উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি মুক্তি পান।

২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে খেলাফত মজলিস কখনও কোনো সংসদীয় আসনে জিততে পারেনি। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জের একটি আসন থেকে দলের সভাপতি আহমাদ আবদুল কাদেরকে গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি।

গত মার্চ ও এপ্রিলের শুরুতে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার পর কাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে হেফাজতের নেতৃত্ব থেকেও বাদ দেয়া হয়। তিনি জুনায়ের বাবুনগরীর নেতৃত্বে কমিটির নায়েবে আমির ছিলেন।

এর আগে যারা জোট ছেড়েছে

এই দলটি জোট ছেড়ে গেলে জোট ছাড়বে মোট পাঁচটি দল। এর আগে ২০১৬ সালের ৭ জুন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় লেবার পার্টি। ২০১৯ সালের ৬ মে ২০ দল ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিভ রহমান পার্থ। সবশেষ গত ১৪ জুলাই জোট ছেড়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।

জোটের আরেক শরিক কল্যাণ পার্টিও ২০ দল ছেড়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপিকে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর দলটির প্রধান সৈয়দ মোহাম্মাদ ইবরাহিম এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রধান শরিক বিএনপি যদি জোটকে সক্রিয় করতে চান, যদি অতীতের ভুলগুলো আত্মসমালোচনা করে পরিবেশ ভিন্ন করতে পারেন, তাহলে আমরা একসঙ্গে পথ চলব। না হলে যদি প্রয়োজন পরে আমরা নিশ্চিতভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের আন্দোলনে আলাদা ভূমিকা রাখব।’

ইবরাহিম ছাড়াও এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের এলডিপিও জোটে থাকতে চায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা আছে প্রায় দুই বছর ধরেই।

২০১৯ সালের জুনের শেষে অলি আহমদের নেতৃত্বে ২০ দলের কয়েকটি শরিক দল মিলে গঠন করা হয় ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে একটি মোর্চা। এতে কল্যাণ পার্টি ছাড়াও ২০ দলের আরেক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপাও ছিল।

এই মঞ্চ গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এসব দলের নেতাদের দূরত্বের সংবাদ আসে গণমাধ্যমে। তবে পরে বিষয়টি আর খুব একটা আগায়নি।’

বিএনপির শরিকরা জোট ছেড়ে গেলেও তাতে জোটে দলের সংখ্যায় কোনো হেরফের হয়নি। কারণ, যখনই কোনো দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখনই দলের অন্য একজন নেতার নেতৃত্বে একাংশ একই নামে আলাদা দলের ঘোষণা দিয়ে ২০ দলে থেকে গেছেন।

অবশ্য বিএনপি এখন তার ২০ দলীয় জোট নিয়ে আগাতে চাইছে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে ছেটে ফেলতে দলের ভেতরে দাবি জোরাল হয়েছে।

সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগে বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন নেতারা। এখন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতের অপেক্ষায় আছে বিএনপি।

২০ দলে জামায়াত ছাড়া বলার মতো শক্তি নেই অন্য কোনো দলের। ফলে জামায়াত ত্যাগ করলে বিএনপির বাকিদের বিষয়ে আগ্রহ থাকার কথা নয়।

২০ দলের পাশাপাশি গত নির্বাচনের আগে গড়ে তোলা নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়েও বিএনপি আর আগাতে চাইছে না। এর বদলে তারা এককভাবে আগাতে চায়। আর আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি দেয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছেন নেতারা। সূত্র : নিউজবাংলা।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!