কয়েকটা ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি সমগ্র বিশ্ব : মুন

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬, ০২:০৩ পিএম
কয়েকটা ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি সমগ্র বিশ্ব : মুন

জাতিসংঘের বিদায়ী মহাসচিব বান কি মুন প্রশ্ন তুলেছেন, গুটিকয় ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের হাতেই আমাদের এই সমগ্র বিশ্ব আজীবন জিম্মি থাকবে কি না। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া সবশেষ ভাষণে নিরাপত্তা পরিষদের সর্বময় ক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করে জাতিসংঘের সংস্কারের প্রশ্নটি জোরালোভাবে সামনে এনেছেন তিনি।

মুনের মতে, এই সংস্থার ক্ষমতা গুটিকয় রাষ্ট্রের হাতে কুক্ষিগত থাকায় সারা বিশ্ব ওই কয়েকটি রাষ্ট্রের হাতে জিম্মি। বিশ্বের সব দেশের সম্মতিই যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। মুনের মতে, জাতিসংঘের স্বচ্ছ ও কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। পরবর্তী মহাসচিবকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

এর আগে ২০১৫ সালের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিতর্কের অন্যতম মূল এজেন্ডা নির্ধারিত হয়েছিল খোদ ওই সংস্থাটির সংস্কারের প্রশ্ন। ২০১৬ সালের সাধারণ অধিবেশনেও সেই সংস্কার প্রশ্নকেই আবারও জোরালো করলেন বিদায়ী মহাসচিব বান কি মুন। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এর বড় ধরনের সংস্কার অপরিহার্য।’

জাতিসংঘ পরিচালনার নীতি অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের হাতেই এর সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত। যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাধারণ পরিষদের কোনো ক্ষমতা নেই। নিরাপত্তা পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য রাষ্ট্রের রায়ই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। পাশাপাশি রয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া আর ফ্রান্সের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা। চাইলেই একক একটি রাষ্ট্র যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিতে পারে।

নিরাপত্তা পরিষদের এই সর্বময় ক্ষমতাকে ইঙ্গিত করে বান কি মুন বলেন, ‘প্রায়ই আমি দেখেছি যে বিশ্বের বহু দেশের সমর্থিত কোনো প্রস্তাব সাধারণ সম্মতির নামে গুটিকয় রাষ্ট্র বাতিল করতে পারে।’ ভেটো ক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করে মুন বলেন, ‘কখনো কখনো একটি রাষ্ট্রই অনেক দেশের সমর্থিত একটি প্রস্তাব বাতিল করে দিতে পারে।’ গুটিকয় রাষ্ট্রের সাধারণ সম্মতিকে কোনোভাবেই সর্বসম্মতি ধরে নেয়া যায় না উল্লেখ করে মুন বলেন, ‘যে বিশ্বসংস্থাকে নিয়ে আমাদের এত আশা-আকাক্সক্ষা, তা ঠিক কেমন করে পরিচালিত হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে বিশ্বের সব মানুষের।’

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার আনতে ২০ বছরেরও বেশি আগে প্রচেষ্টা শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে সে সময়কার সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট স্যামুয়েল ইনসানালি ‘ওপেন-এনডেড ওয়ার্কিং গ্রুপ’ নামে একটি গ্রুপ গঠন করেন। ২০০৫ সালে তারই উত্তরসূরি জ্যান এলিয়াসন (বর্তমানে জাতিসংঘের উপমহাসচিব) এ সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আন্তসরকার আলোচনা (আইজিএন)কে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বাছাই করেন। ওই বছরের ওয়ার্ল্ড সামিটেও সংস্কারের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিত্ব বিস্তৃত করার পক্ষে মতো দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। 

২০০৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৬২/৫৫৭ সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়। এর আওতায়, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিনিধিত্ব প্রশ্নে আন্তসরকার আলোচনার বিষয়টি ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সেই আলোচনা ত্বরান্বিত হয়নি। কয়েক বছর পর, গেল বছর ২০১৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের বিতর্কের মূল এজেন্ডা নির্ধারিত হয় সংস্থাটির সংস্কারের প্রশ্ন। সে সময় নিরাপত্তা পরিষদে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরপেক্ষ প্রতিনিধিত্ব প্রশ্নে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। 

১৪ সেপ্টেম্বর চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তানের তীব্র বিরোধিতার পরও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার বিষয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে সাধারণ পরিষদ। সেই সঙ্গে পরবর্তী বছরের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার আনার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়েও একমত হয় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। তবে এবারের অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে সেই সংস্কার প্রশ্ন নেই। তার পরও মহাসচিব নিজের তাগিদে সংস্কারের প্রশ্নটি সামনে এনেছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Link copied!