ঢাকা: গাজা উপত্যকার মানবিক সংকট এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রতি তিনজন মানুষের মধ্যে দুজনই বর্তমানে দুর্ভিক্ষে ভুগছেন। খাদ্যের অভাবে মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছেন, আর পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) অনাহারে আরও পাঁচ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অথচ মিসর ও জর্ডান সীমান্তে প্রায় ২২ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক অপেক্ষমাণ রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল সেগুলো গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর কর্মীরাও খাদ্য সংকটে ভুগছেন। অনেকে না খেয়ে রাত কাটাচ্ছেন। সংস্থাটির এক কর্মী মানার বলেন, “প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভাবি, আজ কী হবে জানি না। ঘরবাড়ি ছেড়ে এসেছি, নিরাপদ আশ্রয় নেই। সবসময় বোমার আতঙ্ক আর আবার বাস্তুচ্যুত হওয়ার ভয়। খাবার নেই, পানিও নেই।”
সেভ দ্য চিলড্রেন-এর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পরিচালক আহমাদ আলহেনদাওয়ি বলেন, “গাজা থেকে যে ক্ষুধার খবর আসছে, তা তাঁবুতে বোমা ফেলার মতোই ভয়ংকর। শিশুরা শুধু বোমার ভয়েই আতঙ্কিত নয়, যদি তারা বেঁচেও যায়, তাদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের করা কঠিন হয়ে যাবে।”
বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, গত শুক্রবার ইসরায়েল মাত্র ৭৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, যেখানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ ট্রাক প্রয়োজন।
উত্তর গাজার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা যায়, সামাহ মাতার নামের এক মা কোলে নিয়ে বসে আছেন তার ছয় বছরের ছেলে ইউসুফকে। ইউসুফের ওজন যুদ্ধের আগে ছিল ১৪ কেজি, এখন নেমে এসেছে ৯ কেজিতে। তার ছোট ভাই আমির, যার বয়স মাত্র চার, সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত। তার ওজন ৯ কেজি থেকে কমে হয়েছে মাত্র ৬ কেজি।
সামাহ বলেন, এই শিশুদের খাবারে আগে দুধ, চিনি, ফল দিতে হতো। এখন কিছুই নেই, এমনকি ডায়াপারও না। সামান্য ময়দাও অনেক কষ্টে জোগাড় করছি। যুদ্ধের আগে ওরা সুস্থ ছিল।
সোমবার গাজায় আরও ৯৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪৩৯ জন। নিহতদের মধ্যে ২৯ জন ক্ষুধার্ত মানুষ, যারা ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহে খাদ্যের অভাবে মারা গেছেন ১৮০ জন, যাদের মধ্যে ৯৩ জনই শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৬০ হাজার ৯৩৩ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ২৭ জন।
গাজার চলমান সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। ডেমোক্র্যাট দলের একাধিক প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা এই দাবিতে সম্মিলিত হয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেসম্যান রো খান্না এ নিয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন, যাতে বহু গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতা সই করেছেন। একই ধরনের দাবির প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাতেও।
ওএফ
আপনার মতামত লিখুন :