ভারতে ক্ষমতার পালাবদলের আভাস!

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৪:০৪ পিএম
ভারতে ক্ষমতার পালাবদলের আভাস!

ঢাকা : বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতে আগামী পাঁচ বছর কারা শাসন করবে তা জানতে আর ১০০ দিনও বাকি নেই। এ অবস্থায় কংগ্রেসের একটি পদক্ষেপ এ লড়াইকে আরো জমিয়ে দিয়েছে।

গত বুধবার দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের সভাপতি রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশের ঘোষণা দেয়। প্রিয়াংকার রাজনীতিতে আসার বহু কাক্সিক্ষত এ সিদ্ধান্তে ভারতজুড়ে সমর্থকরা ব্যাপক উল্লাসে মেতেছে।

৪৭ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কাকে ইতোমধ্যেই দলের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে এবং দেশটির একটি উল্লেখযোগ্য রাজ্য উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব তার কাঁধে চাপানো হচ্ছে। লোকসভার ৫৪৫টি আসনের ৮০টি এই রাজ্য থেকেই আসেন। আর ভারতের ইতিহাসে ৯ জন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন এই রাজ্য থেকেই।

নন্দিত প্রিয়াঙ্কা : ভারতের রাজনীতিতে সবসময়ই কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি। কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে বিজেপিকে মোকাবেলা করার দায়িত্ব রাহুল গান্ধীর ওপরই। নির্বাচন কাছে এগিয়ে আসার মধ্যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে দলের শীর্ষ পদে বসানোয় রাহুলের ওপর চাপ কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কংগ্রেস। তারা সে সময় মাত্র ৪৪টি আসন লাভ করে। উত্তর প্রদেশে তখন কংগ্রেসের ভোটের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৮ শতাংশ।

এ নির্বাচনের আগে বিশ্লেষকরা বলেন, এ রাজ্যে ভাগ্য ফেরাতে হলে কংগ্রেসের নতুন আইডিয়া ও নতুন মুখের প্রয়োজন। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাকভি বলেন, এ পদক্ষেপটি আশা করা হচ্ছিল। প্রিয়াঙ্কা খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং তাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার বিষয়টি বিজেপির পরিকল্পনায় বেশ প্রভাব ফেলবে।

ভারতের রাজবংশ : ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রভাবশালী অবস্থান গান্ধী পরিবারের । প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর দাদা জওহরলাল নেহরু ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার দাদী ইন্দিরা গান্ধী ও পিতা রাজিব গান্ধীও দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার মা সোনিয়া গান্ধী প্রায় দুই দশক দেশটির সর্ববৃহৎ দু’টি দলের একটি কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন।

২০১৭ সালে এ দায়িত্ব দেয়া হয় তার ভাই রাহুল গান্ধীকে। যদিও রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কা তেমন অপরিচিত কেউ নন, কিন্তু এর আগে তার কর্মতৎপরতা মা ও ভাইয়ের আসন আমেথি এবং রায়বেরেলিতেই সীমাবদ্ধ রাখতেন।

প্রিয়াঙ্কা বিয়ে করেছেন ব্যবসায়ী রবার্ট ভদ্রকে। বিজেপির অভিযোগে ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভদ্র দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। অবশ্য কংগ্রেস বিজেপির এ অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কংগ্রেস ক্রমেই ভালো অবস্থানে উন্নীত হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশের মতো উল্লেখযোগ্য রাজ্যগুলো বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় রাহুলের দল। ২০১৪ সালে ক্ষমতা নেয়ার পর এবারই বিজেপি সবচেয়ে খারাপ ফলের মুখোমুখি হয়।

ফল পাল্টে দেয়া ব্যক্তিত্ব : অবশ্য এখনো অধিকাংশ জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি এগিয়ে আছে। মোদির জনপ্রিয়তা এখনো শীর্ষস্থান দখল করে আছে। তবে এ এগিয়ে থাকা সব সময় শেষের খবর দেয় না। এ মাসে আঞ্চলিক সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির নেতারা মোদিকে চ্যালেঞ্জের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী জোট গঠনের ঘোষণা দেন।

অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জিও কয়েকদিন আগে বড় আকারের একটি সমাবেশের আয়োজন করে, যাতে বিজেপিবিরোধী দলগুলোর অধিকাংশই অংশ নিয়েছিল। আর এখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয়াঙ্কার রাজনীতির প্রবেশ করার বিষয়টি মোদি ও তার ক্ষমতাসীন দলের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমেথির কৃষক জয় প্রকাশ বলেন, রাজনীতির প্রিয়াঙ্কার প্রবেশটা ক্ষমতার খেলার ফলকেই বদলে দেবে।

কারণ লোকজন, তার মধ্যে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিফলন দেখতে পায়। তিনি রাহুলের চেয়ে অনেক বেশি ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তিনিই কংগ্রেসের ট্রাম্প কার্ড বা তুরুপের তাস। সূত্র : আলজাজিরা

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!