রক্তমাখা গায়ে তন্নতন্ন করে স্ত্রী-সন্তানদের খুঁজছিলেন তিনি

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০১৯, ০২:৪০ পিএম
রক্তমাখা গায়ে তন্নতন্ন করে স্ত্রী-সন্তানদের খুঁজছিলেন তিনি

ঢাকা : পুরো দেয়ালজুড়ে লেগে ছিল মাংসের টুকরো, এমন কি ছিটকে গিয়ে পড়েছিল গির্জার বাইরেও। মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ, রক্তের স্রোত, ভাঙা কাচের টুকরো ও ধ্বংসাবশেষ পড়ে ছিল মেঝেতে। আর এর মাঝেই রক্তমাখা গায়ে তন্নতন্ন করে শিশু সন্তানদের খুঁজছিলেন দুই বাবা।

ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জাসহ আটটি স্থানে পরপর আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর শিশু সন্তানদের খুঁজতে থাকা দুই বাবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। স্ত্রী আনিতা (৪২) এবং দুই সন্তান অ্যালেক্স (১৫) ও অ্যানাবেলকে (১১) হাসপাতালে খুঁজতে থাকা বেন নিকোলসন (৪৩) আরেক স্বজনহারা ম্যাথিউ লিনসেকে (৬১) জাড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ম্যাথিউ লিনসেরও দুই সন্তান ডেনিয়েল লিনসে (১৯) এবং অ্যামেলি লিনসে (১৫) নিহত হয়েছে হোটেল সানগ্রি-লাতে দ্বিতীয় বোমা বিস্ফোরণে। বোমা বিস্ফোরণের আগে হোটলটিতে সকালের নাস্তা করার আগ মুহূর্তে নিকোলসন ও ম্যাথিউ দুইজনই দুজনের কাছে অপরিচিত ছিল। সন্তাদের মরদেহ ছাড়াই গত সোমবার লন্ডনে ফিরে গেছেন ম্যাথিউ। শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসকে কটাক্ষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য দুইদেশের এই নাগরিক।

ম্যাথিউ বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনায় যখন আমরা দৌঁড়াচ্ছিলাম তখন আরেকটা বিস্ফোরণ ঘটে। আমার দুই সন্তানই ছিল লিফ্টে। সেখানে সর্বত্রই পানি ছিল। একজন নারী আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।’‘অন্য আরেকজন ব্যক্তি আমার ছেলেকে নিয়ে হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকেন। আমি আমার মেয়েকে তখন হারিয়ে ফেলি, তাই আমি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আমি তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাচ্ছিলাম।’‘আমি হাসপাতালে তার চিকিৎসার জন্য চিৎকার করছিলাম। চিকিৎসকরাও চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এগুলো ছিল প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম।’

‘হাসপাতালে আমি আমার মেয়েকে মৃত অবস্থায় পাই। এর পরেই বেন নিকোলসনকে আমি এ কথা জানাই যিনি এ হামলায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হারিয়েছেন। হাসপাতালে নিকোলসন তার ছেলেকে খুঁজচ্ছিলেন।’হোটেলটিতে যখন বোমা বিস্ফোরণ হয় তখন আনিতা ও তার দুই সন্তান সকালের নাস্তা করছিলেন। নিকোলসনই এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বেঁচে আছেন।

এদিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পর নিকোলসনকে রক্তমাখা গায়ে তন্নতন্ন করে তার পরিবারকে খুঁজতে দেখা যায়। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে পরিবারকে নিয়ে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন। করুণকণ্ঠে নিকোলসন জানান, ‘তারা তিনজনই কোনো যন্ত্রণা না পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে।’‘স্ত্রী সন্তানদের হারিয়ে আমি খুবই দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আনিতা ছিল অসাধারণ, পারফেক্ট এবং বুদ্ধিমান স্ত্রী। একই সঙ্গে ছিল সন্তানদের ভালোবাসার মা।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!