পাক বাহিনীর বর্বরতা শরীরে, তারপরও স্বীকৃতি মেলেনি ...

  • ঝিনাইদহ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০১৯, ০৬:৪৬ পিএম
পাক বাহিনীর বর্বরতা শরীরে, তারপরও স্বীকৃতি মেলেনি ...

ছবি : সোনালীনিউজ

ঝিনাইদহ : মাথা ও পিঠে হানাদার পাক বাহিনীর ছোড়া গুলির ক্ষত চিহ্ন আনোয়ারা বেগমের। অসহ্য যন্ত্রণা তাতে। এই যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও তার নিহত স্বামী শামছদ্দিন মন্ডলের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায়। অথচ নিজে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। চোখের সামনে আনোয়ারা বেগম দেখেছেন স্বামী ও তার দুই সন্তান সিদ্দিকুর রহমান এবং মেয়ে জাহানারার করুণ মৃত্যু। বিষয়খালী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দিকভ্রান্ত পাক বাহিনী বড়গড়িয়ালা গ্রামে ঢুকে তাদের হত্যা করে। হত্যার পর তাদের একটি গর্তে ফেলে রাখা হয়। লাশ আর ছোপ ছোপ রক্তের মৃত্যুকূপ থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যান আনোয়ারা ও তার দুই শিশু সন্তান আবু সামা মন্ডল আর সিদ্দিকুর রহমান।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালীসহ আশপাশের নৃসিংহপুর, খড়িখালী ও গড়িয়ালা গ্রামের বহু মানুষ এই যুদ্ধে হতাহত হন। বিষয়খালী যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা তোয়াজ উদ্দীন, আনোয়ার হোসেন ও আব্দুস সোবাহানের দেওয়া তথ্যমতে শামছদ্দিন মন্ডল ছিলেন তাদের সহযোগী। সম্মুখ যুদ্ধে অংশ না নিলেও রসদ সরবরাহ করতেন। ঘটনার সময় তিনি বিষয়খালী বাজার থেকে বাড়ি যান দুপুরের খাবার খেতে। নিজ বাড়িতেই নিজের দুই সন্তানসহ নিহত হন তিনি। সেই হিসেবে শামছদ্দিন মন্ডলও একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি ও তার দুই সন্তানের নাম রয়েছে বিষয়খালী বাজারে প্রতিষ্ঠিত একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্যে। এখানে গিয়ে দেখা যায় ৫নং ক্রমিকে শামছদ্দিন মন্ডলের নাম, ৬নং মেয়ে জাহানারা বেগম ও ৭নং ছেলে সিদ্দিকুর রহমানের নাম লেখা। ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারিভাবে এই ভাস্কর্যটি তৈরি করে। অথচ এই পরিবারটির সদস্যরা একেবারেই হতদরিদ্র। ছেলেরা রাজমিস্ত্রি ও চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি। নেই বাড়িতে স্যানিটারি ল্যাট্রিন। সরকারিভাবে এখনো কোনো ভাতা এমনকি ভিজিডি ও ভিজিপিও দেওয়া হয় না।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে নেই কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান। গুলিবিদ্ধ আনোয়ারা বেগম ক’বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। এতে তার দুরাবস্থা ঘোচে না। প্রতি মাসে তার চিকিৎসা ব্যয় তিন হাজার টাকা। স্ট্রোকে প্যারালাইজড হয়ে গেছে শরীর। দরিদ্র সন্তানরা তার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে নিজেদের সংসারও ঠিক মতো চালাতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার হিসেবে তালিকায় নাম ওঠাতে নেই কোনো কাগজপত্র। একমাত্র সম্বল কেবল বেঁচে থাকা এলাকার ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ডিসি, ইউএনও অফিস ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দারস্থ হয়েছেন। সহায়তা তো দূরের কথা ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের পর্যন্ত করে দিয়েছেন। অথচ পাক বাহিনীর সীমাহীন বর্বরতার শিকার এই পরিবারটির আত্মদানে আজ বাংলাদেশে উড়ে লাল নীল পতাকা। স্বাধীন ভুখন্ডে আমরা গেয়ে চলেছি সাম্যের গান। নিজস্ব মানচিত্রের বদৌলতে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে চলেছি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া-রুপসা থেকে পাথুরিয়া।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Link copied!