গৃহকর্মী রাখার আগে জেনে নিন এসব অতিব জরুরি বিষয়

  • সোনালী ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
গৃহকর্মী রাখার আগে জেনে নিন এসব অতিব জরুরি বিষয়

ফাইল ছবি

ঢাকার মোহাম্মদপুরে মা লায়লা আফরোজ ও মেয়ে নাফিজাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে গৃহকর্মী নিরাপত্তা। পুলিশ সন্দেহ করছে, মাত্র চার দিন আগে অস্থায়ীভাবে কাজ নেওয়া তরুণী আয়েশাই হয়তো এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তদন্তে প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগেও গৃহকর্মীর মাধ্যমে এমন হত্যাকাণ্ড বা বড় ধরনের অপরাধের নজির রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়-যথাযথ যাচাই-বাছাই না করেই অচেনা মানুষকে ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহকর্মী নেওয়ার আগে কিছু মৌলিক ও প্রমাণ-ভিত্তিক নিয়ম মানা অত্যন্ত জরুরি। এগুলো মানলে ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে। নিচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।

পরিচয় যাচাই ও নথি সংরক্ষণ
গৃহকর্মী নেওয়ার আগে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, স্থায়ী ঠিকানা, অভিভাবকের নাম, মোবাইল নম্বর-সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে এনআইডি নম্বর যাচাই করে দেখা উচিত। এসব তথ্যের কপি ঘরে সংরক্ষণে রাখলে ভবিষ্যৎ ঝামেলা এড়ানো যায়।

পূর্বের কাজের রেফারেন্স যাচাই
আগে কোথায় কাজ করেছে, কত দিন করেছে এবং আচরণ কেমন ছিল-এসব জানতে হবে। পূর্বের নিয়োগকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে তার কাজের ধরন ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত হওয়াই নিরাপদ।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শারীরিক সক্ষমতা
গৃহকর্মীর সাধারণ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানা জরুরি। রান্না, পরিষ্কার বা শিশুর দেখাশোনা-যে কাজই করুক না কেন, তার শারীরিকভাবে সক্ষম কিনা তা দেখুন। দীর্ঘমেয়াদি কাজের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো ভালো।

চাকরির শর্তাবলি লিখিতভাবে ঠিক করা
বেতন, দায়িত্ব, কাজের সময়, সাপ্তাহিক ছুটি-সবকিছুর লিখিত চুক্তি করা উচিত। একটি কপি নিয়োগকর্তা এবং আরেকটি গৃহকর্মীর কাছে থাকা দরকার। এতে ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

ঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সীমাবদ্ধতা জানিয়ে দেওয়া
কোন ঘরে প্রবেশ করা যাবে, কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে না-এসব স্পষ্টভাবে বলে দিন। ঘরের সিসিটিভি ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তাকেও জানানো উচিত।

স্থানীয় থানা বা ইউনিয়ন পরিষদে নিবন্ধন
গৃহকর্মী নিয়োগের পর অনেকেই কাছাকাছি থানায় বা স্থানীয় প্রশাসনে এ তথ্য জানাতে ভুলে যান। নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহকর্মীর পরিচয় ও ঠিকানা থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতে কোনো ঝামেলা হলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।

এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মী নিলে যাচাই-বাছাই জরুরি
বর্তমানে অনেকেই এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মী নেন। সে ক্ষেত্রে এজেন্সিটির রেজিস্ট্রেশন, সুনাম, পরিচিতি এবং পূর্বের ক্লায়েন্টদের অভিজ্ঞতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সমস্যায় এজেন্সির দায়বদ্ধতা রয়েছে কি না, তাও দেখতে হবে।

অচেনা বা হঠাৎ আগত গৃহকর্মী না নেওয়া
হঠাৎ পরিচিতের মাধ্যমে বা অস্থায়ীভাবে আসা গৃহকর্মী নেওয়ার মধ্যেই বড় ঝুঁকি থাকে। পরিচয় যাচাই না হওয়া পর্যন্ত কাউকে রাতারাতি নিয়োগ না দেওয়াই নিরাপদ।

ব্যক্তিগত ও মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখা
গৃহে নগদ টাকা, গয়না, গুরুত্বপূর্ণ নথি বা পাসওয়ার্ড লিখে রাখা জিনিস উন্মুক্ত স্থানে না রাখা উচিত। যেকোনো অপরাধের বড় অংশ ঘটে অসতর্কতার কারণে।

আচরণগত পরিবর্তন নজরে রাখা
গৃহকর্মীর আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন, অস্বাভাবিক ফোন ব্যবহার, অতিরিক্ত কৌতূহল, ঘরের ভেতরে অনধিকার প্রবেশ-এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। প্রয়োজন হলে সময় নিয়ে কথা বলা বা সতর্ক করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু গৃহকর্মীকে নিয়োগ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার পরিচয়, ইতিহাস, আচরণ-সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। ন্যূনতম এই নিয়মগুলো মানলে অনেক অঘটনই আগেভাগে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এসএইচ 

Link copied!